মনজুর রাজা চৌধুরী : কীর্তিমান শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৯:৪১,অপরাহ্ন ১১ নভেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৯০৩ বার পঠিত
বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল:
মনজুর রাজা চৌধুরী একজন কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ এবং প্রকৌশলী। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং সার্বজনীন জীবনব্যবস্থার প্রচার-প্রসারে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সামগ্রিক জীবন এমন একটি আলোক বিন্দুতে প্রতিভাত হয়েছে যার দরুন তাঁর জীবনোদ্দেশ্যকে সেদিকেই নিবেদিত করেছেন। মা, মাটি ও দেশমাতৃকার প্রেমে সিক্ত ব্যক্তিত্ব মনজুর রাজা চৌধুরী দেশ এবং প্রবাসে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করছেন। সমাজ এবং দেশের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ মানুষের কাছে তাঁর সম্মান ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শিক্ষার প্রসার, সমাজসেবায় তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মনজুর রাজা চৌধুরীর জীবনধারা এমন একটি স্রোতে প্রবাহিত হয়েছে যা সার্থকতারই বহিঃপ্রকাশ। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি মনে পড়ে জনৈক দার্শনিক ও সমাজসংস্কারের একটি বক্তব্য, ‘পৃথিবীতে যখন এসেছিস, দাগ রেখে যা’। এ কথাটি অত্যন্ত প্রযোজ্য মনজুর রাজা চৌধুরীর ক্ষেত্রে। কারণ তাঁর জীবনে তিনি যা কিছু করেছেন বা করছেন সবকিছুই সেই দাগ রাখার একটি সার্থক প্রয়াস। মনজুর রাজা চৌধুরী ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিবেচনায় কালপ্রবাহে আটকে না থেকে মানবকল্যাণেই নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। এখানেই তাঁর ব্যক্তি স্বতন্ত্রতা।
মনজুর রাজা চৌধুরী একটি ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ পরিবারের উত্তরাধিকারী। তিনি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে করিমগঞ্জ জেলার প্রতাবগড়ে এক খ্যাতনামা জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন দেওয়ান আছাদুর রাজা চৌধুরী। তিনি ছিলেন একজন বিচারপতি। একজন বিচারপতি হিসেবে তিনি দেশব্যাপী সমাদৃত ছিলেন। অত্যন্ত সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং ন্যায়পরায়ণতার সাথে তিনি বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। তাঁর মাতা রাবেয়া চৌধুরীও ছিলেন একজন বিদূষী মহিলা। একজন গুণবতী নারী হিসেবে তিনি সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। মনজুর রাজা চৌধুরীর চাচা দেওয়ান আজফর রাজা চৌধুরী ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র। কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেন। এছাড়া একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও তিনি ছিলেন সকলের কাছে সমধিক জনপ্রিয়। মনজুর রাজা চৌধুরীর আরেক চাচা ছিলেন একজন স্বনামধন্য আইসিএস পাশ অফিসার। মনজুর রাজা চৌধুরীর দাদা ছিলেন প্রতাবগড় এস্টেটের জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে ৪০ হাল জায়গা প্রতাবগড়ের সাথে বদল করে সিলেটে চলে আসেন। কিন্তু তারা বসবাস শুরু করেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুরের ভাটাউছি গ্রামে। মনজুর রাজা চৌধুরীর আব্বা এবং দাদারা থেকে যান করিমগঞ্জের প্রতাবগড়ে। পরবর্তীতে সেখানেই তারা বসবাস শুরু করেন।
মনজুর রাজা চৌধুরী প্রাথমিক লেখাপড়া করেন দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি রাজনগরের বিমলাচরণ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, বাংলা ও ইতিহাসে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। মনজুর রাজা চৌধুরী ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে গিয়েও তিনি পড়ালেখা তথা অধ্যয়ন থেকে দূরে সরে যাননি। বরং তিনি সিট অব লন্ডন পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা ইন এম্পয়মেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন থেকে বিএসসি অনার্স (১ম বর্ষ) সমাপ্ত করেন। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে মনজুর রাজা চৌধুরী একজন অধ্যয়ন নিবিষ্ট ব্যক্তিত্ব। বিলেতের যান্ত্রিক ব্যস্ততাও থাকে জ্ঞানার্জন থেকে সরাতে পারেনি।
মনজুর রাজা চৌধুরী একজন সার্থক ও আদর্শবান দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব। কর্মক্ষেত্রেও তিনি রেখেছেন যথাযথ যোগ্যতা ও দক্ষতার অনন্য ছাপ। তিনি মনে করেন, একটি দেশকে সত্যিকার অর্থে উন্নত করতে হলে সে দেশের মানুষকে আগে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, পরিশ্রমপ্রিয়তা এবং অধ্যবসায়ের শিক্ষা নিতে হবে। এর বিকল্প কোনো উপায়ে দেশের অর্থনীতি কিংবা কোনো সার্বিক পরিবর্তন আনয়ন করা সম্ভব নয়। মনজুর রাজা চৌধুরী তাঁর কর্মজীবনে এটাকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। দেশসেবায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন। এর মধ্যেই খোঁজে নেন নিজের ভালোলাগা ও ভালোবাসা। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বাংলাদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রায় ১৪ বছর কাজ করেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে তিনি সেকশন অফিসার ছিলেন। এসময় তিনি অত্যন্ত যোগ্যতা, দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। যা তাঁকে এনে দেয় মানবিক সম্মান এবং মর্যাদা। সকলের কাছে তিনি একজন কর্তব্যপরায়ণ আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
মনজুর রাজা চৌধুরী ব্রিটেনের স্থানিক সভ্যতায় নিজেকে গড়ে তুলেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন কাজের অফার পেলেও শিক্ষকতা পেশাকে তাঁর জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেন। তিনি মনে করেন, একজন শিক্ষক হচ্ছেন বাগানের মালীর মতো। যে বাগানের ফুলগুলো খুব যতন করে আগলে রাখে। একজন আদর্শ শিক্ষক হচ্ছেন জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বাগানের মালীর মতো আগলে রাখেন বলেই তারা দেশ ও জাতির জন্য নিজেদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। একটি দেশের প্রধান ব্যক্তিত্ব যদি রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করা হয়–তবে বলতে হয়, সেই রাষ্ট্রপতির উত্থান তথা গড়ে ওঠাই একজন শিক্ষকের হাত ধরে। তাই মনজুর রাজা চৌধুরীর জৈবনিক সার্থকতা এখানেই নিহিত। তিনি কর্মজীবনে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিয়েছেন যারা সমাজ এবং দেশের জন্য নিজেদেরকে সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। তাদের প্রত্যেকেই স্ব স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত ও সমাদৃত। মনজুর রাজা চৌধুরী ইসলামিক কলেজ লন্ডন, উইলিয়াম ডেভিড স্কুল, জামিয়াতুল উম্মাহ এবং বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলের অধীনে বিভিন্ন কমিউনিটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এখনও তিনি শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া প্যারেন্টস্ এডভাইজ ওয়ার্কার ও ওয়েলফেয়ার রাইট এডভাইজার হিসেবেও তিনি কাজ করেন।
সমাজসেবার জন্য মনজুর রাজা চৌধুরীর অবদান অপরিসীম। তিনি বৃটেনের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কমিউনিটি সংগঠনের সাথে জড়িত। এসকল কমিউনিটি সংগঠনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে তিনি সমাজকল্যাণে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি ব্রিটেনে অবস্থানরত বাংলাভাষী মানুষের কাছে এক সুপরিচিত নাম। তিনি সুখে-দুঃখে সকল মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাঁর মানবতাবাদী কার্যক্রমই প্রমাণ করে তিনি এমন একটি বংশধারা বয়ে নিয়ে চলেছেন যা ইতিহাস-ঐতিহ্য বিবেচনায় সমধিক প্রশংসিত ও সমাদৃত। মনজুর রাজা চৌধুরী বাংলাদেশ টিচার্স এসোসিয়েশন ইউকে’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বড়লেখা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে’র (জিএসসি) কেন্দ্রীয় এডুকেশন সেক্রেটারী (১৯৯৭-৯৯), জিএসসি’র সাউথ-ইস্ট রিজিওনের ভাইস চেয়ারম্যান (১৯৯৭), জিএসসি লন্ডন শাখার সভাপতি (১৯৯৯), রেডব্রিজ ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কো-অর্ডিনেটর (২০০১), জিএসসি এসেক্স শাখার সভাপতি (২০০৪) সহ বিভিন্ন সংগঠনে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মনজুর রাজা চৌধুরী জালালাবাদ পঙ্গু হাসপাতাল, বড়লেখা কাঁঠালতলী টাইটেল মাদরাসা, মাহফুজ শিশু হাসপাতাল, কুলাউড়া সিলেট-এর আজীবন দাতা সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। এছাড়া তিনি আর. রাশাদ ট্রাস্ট মাদরাসা, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী এডুকেশন স্টোরের আজীবন সদস্য, ট্রাস্টি ও এডভাইজার হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সর্বদা তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করে থাকেন।
মনজুর রাজা চৌধুরী দায়বদ্ধ সমাজ পরিবর্তনের এক স্বাপ্নিক কারিগর। নিজের পূর্বপুরুষদের ঐতিহের ধারা বেয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন তাঁর লক্ষ্যপানে। বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। বিলেতের চাকচিক্যময় পরিবেশে থেকেও তিনি কখনো ভুলে যান না তার প্রিয় মাতৃভূমিকে। তিনি পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির মায়ায় সেখানকার উন্নয়নে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তুলেছেন প্রতাবগড় ফাউন্ডেশন। তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এছাড়া এতিম, অসহায়, ভিক্ষুক এবং স্বাস্থ্যসেবা হীন মানুষদেরকে বিভিন্নভাবে এই ফাউন্ডেশন সহায়তা করে যাচ্ছে। তিনি বর্তমান আবাসস্থল শাহবাজপুর ও সিলেট শহরের নিজস্ব বাসা প্রতাবগড় হাউসে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বড়লেখার ভাটাউছি গ্রামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রতাবগড় ফাউন্ডেশন’স ওয়েলফেয়ার সেন্টারের নিজস্ব ভবন ও ফ্রি মেডিকেল সেন্টার। এ ছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থা এবং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঢাকা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট বিভাগে নানামুখী সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
মনজুর রাজা চৌধুরী একজন ধর্মপরায়ণ মুসলিম। ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সৎ, আন্তরিক, অমায়িক এবং বিনয়ী ব্যক্তি হিসেবে সকলের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র। একটি জমিদার পরিবারের সার্থক উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে নেই কোনো অহমিকা বা অহংবোধ। বরং তিনি সকল স্তরের মানুষকে খুব সহজেই বুকে টেনে নেন। এজন্য সকলের কাছে তাঁর রয়েছে আলাদা ও স্বতন্ত্র গ্রহণযোগ্যতা। ইসলামী তাহজিব-তমুদ্দুন রক্ষা এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসারে তিনি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে ইসলামের প্রচার-প্রসারে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সিলেট মুসলিম সেন্টার ইউকে’র সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট মুসলিম সেন্টার ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও গবেষক শায়খ এইচ এম শফিকুর রহমান আল মাদানী অনূদিত আল কুরআলের সহজ তরজমা ‘আল কুরআনুল কারিম’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। এ তরজমা গ্রন্থটি ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাভাষী অন্তত আট হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত সিলেট মুসলিম সেন্টার ইউকের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষকে আল কুরআনের শিক্ষায় অগ্রবর্তী করে তোলা। এ লক্ষ্যেই তার পথচলা। মনজুর রাজা চৌধুরী সিলেট মুসলিম সেন্টারের কার্যক্রমকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করার লক্ষ্যে তাঁর মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা, সময় এবং মূল্যবান আর্থিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাভাষী মানুষের কাছে কুরআনের আহবান পৌঁছিয়ে দেওয়ার যে মিশন নিয়ে সিলেট মুসলিম সেন্টার ইউকে কাজ করে যাচ্ছে এর অন্যতম নাবিক হচ্ছেন মনজুর রাজা চৌধুরী। তাঁর মূল্যবান পরামর্শ ও সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সিলেট মুসলিম সেন্টারের কল্যাণে তিনি যথাযথ ও সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মনজুর রাজা চৌধুরী ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে একটি সম্ভ্রান্ত রাজ পরিবারের প্রতিনিধি। কালের বিবর্তনে এ রাজবংশের ইতিহাস-ঐতিহ্য বিলীন হলেও এর সাক্ষী প্রোজ্জ্বলভাবে সমাদৃত হয়ে আছে। ঔপনিবেশ কাল থেকে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল যেসকল রাজ্যে বিভক্ত ছিল, প্রতাবগড় বা জফরগড় রাজ্য ছিল তার অন্যতম। মূলত খৃস্টীয় চতুদর্শ শতাব্দীতে বর্তমান মৌলভীবাজার অঞ্চলের পূর্বাঞ্চল এলাকা নিয়ে প্রতাবগড় রাজ্য গঠিত হয়েছিল। এ রাজ্যে পাথারিয়া পরগনা বর্তমান মৌলভীবাজার অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মনজুর রাজা চৌধুরী সে রাজবংশেরই একজন সার্থক উত্তরাধিকারী। তিনি তাঁর কর্মদ্বারা সে ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অম্লান রেখে চলেছেন। ব্যক্তিজীবনে তিন সন্তানের জনক মনজুর রাজা চৌধুরী অবসর সময়ে বই পড়া, ভ্রমণ এবং বাগান করাকেই বেশি পছন্দ করেন।
মনজুর রাজা চৌধুরীর সামগ্রিক জীবন একটি মহত্তর বিবেচনার দাবি রাখে। ব্যক্তি, পরিবার এবং সামাজিক ক্ষেত্রে তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিক্ষার প্রচার-প্রসারে তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তা একজন প্রোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বেরই স্মারক। ব্যক্তি, সমাজ এবং পারিপার্শ্বিক দায়বোধ তাঁর নিজস্বতায় যে নৈতিক প্রভাব ফেলেছে, তাঁর নানামুখী কার্যক্রমেই সেটা প্রতিফলিত হচ্ছে। কালবিবেচনায় তিনি যে ভূমিকা রেখে চলেছেন তা সময় অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পাঠযোগ্য করে রাখবে। বিশেষ করে তাঁর আদর্শিকতা, নৈতিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং স্বজাত্যবোধ্যতা। প্রবাসের গণ্ডি পেরিয়েও যার মন পড়ে থাকে দেশের কোণে, তাঁর ব্যক্তিপ্রভা বিবেচনায় বলতেই হয়–তিনি একজন সার্থক মানুষ। সার্থক তাঁর মানবজীবন। জীবনের সার্বিক এবং সামগ্রিকতায় তাঁর জীবনের যে পরিপূর্ণতা তা যেন আত্মতৃপ্তিতেই পরিসমাপ্তি হয়–এটাই প্রত্যাশা। আমি তাঁর দীর্ঘজীবন কামনা করি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, প্রকাশক ও সংগঠক।