মসজিদ উন্মুক্ত ও তারাবীহ বিষয়ে: প্রধানমন্ত্রী ও আলেমদের মানানসই সমাধান চাই
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৭:৫১,অপরাহ্ন ১৬ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ২৩৬০ বার পঠিত
।। ইমদাদুল হক নোমানী ।।
আসন্ন রমজান মাসে তারাবীর নামাজ ঘরে বসে আদায় করার অনুরোধ জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সউদী আরবেও মসজিদে জমায়েতের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। সেখানে রমজানের তারাবীর নামাজ মসজিদে না পড়ার বিষয়ে বলা হয়েছে।
.
অন্যদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরাম মসজিদসমূহ উন্মুক্ত করে, নিয়মিত নামাজ ও রমজানে তারবীহ পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তাঁরা ধর্মীয় বিধিমালা ও যৌক্তিকতার নিরিখে এ দাবী তুলে বলেন, সকল সুস্থ ব্যক্তি সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে জুমআ, পাঞ্জেগানা ও তারাবীর জামাতে উপস্থিত হতে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আদিষ্ট। সুস্থ ব্যক্তিদেরকে মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করা শরীয়াহ সম্মত নয়। সুতরাং সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি যে জুমআ, পাঞ্জেগানা ও তারাবীর জামাতে মসজিদে সুস্থ মুসল্লিদের উপস্থিতি বাধামুক্ত করে দেয়া হোক!
.
নামাজীর সংখ্যা তুলে দিয়ে মুসল্লীদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীসহ দেশের শীর্ষ পনেরজন আলেম বিগত ৮ এপ্রিল প্রথম বিবৃতি দেন। এ দাবীকে সমর্থন জানিয়ে দেশের আরও সত্তরজন খ্যাতনামা আলেম বিবৃতি প্রদান করেন গত ১৪ এপ্রিল। দাবীর স্বপক্ষে আজ ১৬ এপ্রিল ঢাকা ও সিলেটের সিনিয়র উলামা-মাশায়েখগন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি আরও জোরালো আহবান জানান। বাংলাদেশের উলামাদের এ আহবান বা দাবী, পাকিস্তানের সম্মিলিত উলামায়ে কিরামের সিদ্ধান্তের সাথে মিল রয়েছে। এ ব্যপারে ভারতের দেওবন্দের সিদ্ধান্ত হলো, অবস্থার আলোকে অন্যান্য নামাজের মতো তারাবীহও ঘরে বা মসজিদে আদায় করা। অন্যদিকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মহাসচিব আল্লামা মাহমুদ মাদানী গতকাল ১৫ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের মুসলমানদেরকে রমজানের তারাবীহ ঘরে আদায় করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
.
বিরাজমান পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে এগুচ্ছে। চরম আতঙ্ক, উৎকন্ঠার মাঝে দেশের মানুষ। এরিমধ্যে সরকার ও উলামায়ে কিরামের দ্বিমুখী ভাবনা, আহবান সাধারণ মুসল্লীদের মাঝে বিরাজ করছে মিশ্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। মাঠপর্যায়ে উলামাদের এ বিবৃতি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়ায় পক্ষে বিপক্ষে স্ট্যাটাস ও কমেন্ট চোখে পড়ার মতো। সবমিলিয়ে সিংহভাগ আহলে ইলিম ও সাধারণ মুসল্লীরা এ দাবীকে যৌক্তিক মনে করে সাধুবাদ জানালেও সচেতন কিছু আলেম ও সাধারণ জনগণ একে স্বাগত জানাতে পারছেন না।
.
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মানুরাগী। ধর্মীয় আবেগও বেশী। ধর্মপ্রাণ কিছু মানুষ আবার বিপদে পড়লে হয় আরও বেশি ধার্মিক, আবেগী। সার্বিক বিবেচনায় এ মহামারীতে সবাই চায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল মসজিদে গিয়ে ইবাদত বন্দেগি করতে। আল্লাহর ঘরে কান্নাকাটি করে একটু বাঁচতে। কুরআন নাযিলের মাসে বাচ্চাদেরকেও কুরআনের তা’লীম দিতে চায় সবাই। এর উসিলায় যদি আল্লাহপাক মাফ করে দেন।
.
বিদ্যমান অবস্থায় আমরা নামক সাধারণ মানুষরা পড়েছি চরম বিপাকে। কাকে ধরি; কাকে ছাড়ি! দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সরকারের নির্দেশনা মানা (ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে) আমাদের জন্য জরুরী। অন্যদিকে ধর্মীয় নেতা উলামায়ে কিরামের দিকনির্দেশনা ফলো করাও আবশ্যক।
.
এহেন মুহুর্তে আমরা চাই, সমন্বিত একটি সুন্দর, সুষ্ঠু সমাধান এবং গ্রহণযোগ্য নির্দেশনা। উলামায়ে কিরামের চৌকসী ভূমিকা। বর্তমান করোনা যুদ্ধে এমন আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত যাতে না নেওয়া হয়; যাতে পরবর্তী প্রজন্ম “রাজাকারের” তকমা নিয়ে বাঁচতে হয়। অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত যেনো ধর্মবিদ্বেষী, নাস্তিক, প্রগতিশীল মুক্তমনাদের টকশো’র খোরাক না হয়। আবার দ্বীনের প্রশ্নে এমন আপোষ বা নিরবও যেনো না হন; যাতে মুসলিম উম্মাহ মুরব্বী উলামায়ে কিরামের প্রতি হতাশ এবং আস্থাহীন হয়ে যায়। সরকারের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি ও দ্বীনকে সামনে রেখে একটি মানানসই ফয়সালা ও সমাধানে উপনীত হওয়া এখন সময়ের দাবী। আমরা সেই অপেক্ষায়।