খাদ্য সহায়তার দাবীতে ‘শুয়ে’ সড়ক অবরোধ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৪৯:৫৯,অপরাহ্ন ১৬ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৫২৪ বার পঠিত
কুড়িগ্রাম থেকে সংবাদদাতা:: করোনাভাইরান প্রতিরোধে ঘরবন্দি মানুষ। ঘরে খাবার নেই, বাহিরে কাজ নেই, পকেটে টাকা নেই। এমন অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
এমন পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে খাদ্য সহায়তার দাবিতে উলিপুর-রাজারহাট সড়ক অবরোধ করে রাখেন কয়েকশ’ কর্মহীন মানুষ। তারা বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে ও রাস্তায় শুয়ে এই দাবি জানান।
পরে উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা সেখানে গিয়ে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে, তারা অবরোধ তুলে নেয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ অবরোধ চলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উলিপুর-রাজারহাট সড়কের সরপদীতে কয়েকশ নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে খাদ্যের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। কোনো যানবাহন এলে রাস্তায় শুয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় একজন জানান, পরপর তিন দফায় সরকারি খাদ্য বিতরণ করা হলেও, তাদের কেউ এই সহায়তা পাননি।
আবু মিয়া জানান, আমরা নিদারুণ কষ্টে দিন পারি দিলেও জনপ্রতিনিধিরা কেউ খোঁজ নিচ্ছেন না।
ওই এলাকার মাহমুদা বেগম জানান, বাসায় খাবার নাই। একবেলা ভাত জোটে তো আরেক বেলা নাই। সবাই সরকারি ত্রাণ পায়। আমরা পাই না কেনো- তাই রাস্তায় নামছি।
এ রকম অভিযোগ সেখানে আসা সব মানুষেরই। তাদের কথা, এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানরা তাদের লোককে রিলিফ দেয়। তাকে যারা ভোট দেয় নাই, তাদেরকে দেয় না।
এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম রাজু এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে বলেন, ওই এলাকার মানুষজনের জাতীয় পরিচয়পত্র নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাই পাবেন।
ওই এলাকায় ১৮০০ ভোটারের মধ্যে, তিন দফায় প্রায় প্রায় ১০০ জনকে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানান মহিলা সদস্য শামসুন্নাহার বেগম।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সী বলেন, তার এলাকায় কেউ অনাহারি মানুষ নাই। সমস্যা থাকতে পারে। সরকারি ঘোষণা ছিল, বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। এ কারণে, সবাই ত্রাণ চায়। অথচ যারা রাস্তায় নেমেছেন, তাদের কারো বয়স্কভাতার কার্ড আছে, প্রতিবন্ধী, ভিজিডিসহ বিভিন্ন সরকারি সহায়তার কার্ড আছে।
অভাব নাই তাহলে কোনো রাস্তায় নামলো- এ প্রসঙ্গে ওই চেয়ারম্যান বলেন, ওই ওয়ার্ডের সরপদী কানি পাড়ায়, সম্প্রতি ঢাকা থেকে আবু নামের একজন গার্মেন্টস শ্রমিক এসেছে। সে এই মানুষজনকে উস্কে দিয়েছে। তার নিশ্চয় কোনো দুরভিসন্ধী আছে।
তিনি আরও বলেন, তিন দফায় তার ইউনিয়নে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১০মেট্রিক টন চাল। প্রথম দফায় ২ মেট্রিক টনে ২০০ জনের বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ২৫ জনের বরাদ্দ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দিতে হয়েছে। পরের দফায় ৩০০ জনের বরাদ্দের মধ্যে ৫০ জনের, তৃতীয় দফায় ৫০০ জনের বরাদ্দের মধ্যে ৭৫ জনের বরাদ্দ আওয়ামী লীগ নেতাদের দিতে হয়েছে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তার এলাকায় ভোটার প্রায় ১৯ হাজার। জনসংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার। বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ১ হাজার জনের।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাদের বলেন, সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। আগামী বরাদ্দে তাদের নাম তালিকায় থাকবে এই আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেয়।