গুজব ও মিথ্যা সংবাদ প্রচারে ইসলাম
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১৭:১৬,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৮০৪ বার পঠিত
।। ইমদাদুল হক নোমানী ।।
গুজব মানে রটনা; যার কোন ভিত্তি নেই। গুজব মানেই ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার। মূলত মানুষের মুখে মুখে এটি বেগবান হয়। ছড়িয়ে পড়ে মুহুর্তের মধ্যে সর্বত্র। গুজব ছড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও জনমনে আতংক সৃষ্টি করা। হেয় প্রতিপন্ন করা।
.
তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ সহজ করেছে। মোবাইল ও ইন্টারনেটের যুগে গুজব ছড়ানো এখন খুবই সহজ। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ও ব্লগগুলোয় গুজব ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। গুজবের দাবানলে জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে সমাজের শান্তি-শৃংখলা। কখনও কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ।
.
কোনো বিষয়ে সঠিক জানা না থাকলে, আন্দাজে তা না বলার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করেছেন। সূরা বনী ইসরাইলে আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত বিশ্বাস নেই আন্দাজে তা প্রচার করো না। কেননা চোখ, কান ও অন্তুর এ সমস্তরই জবাবদিহিতা করতে হবে।’ কোনো কথা শোনামাত্র তার সত্যতা যাচাই না করেই মানুষের কাছে প্রচারকারীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. তাদেরকে মিথ্যাবাদী হিসেবে গণ্য করে বলেছেন, ‘শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ -আবু দাউদ : ৪৯৯২
.
ইসলামে গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং মদিনায় গুজব রটনাকারীরা যদি বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দিতে আপনাকে উত্তেজিত করব।’ -সুরা আহযাব: ৬০
গুজব ছড়িয়ে যারা মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সম্মানহানি করে, তাদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, ‘যারা সতী সাধ্বী নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর এর স্বপক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করনা। কেননা তারা নাফরমান।’ -সুরা নুর: ৪
.
জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংবাদের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হলো, এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন ও প্রচারের আগে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। যেকোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রচার করা আল্লাহর হুকুমের লঙ্ঘন। আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ হচ্ছে, ‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ -সুরা হুজরাত : ৬
.
সমাজে কোনো গুজব বা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে, মুসলমানদের উচিত তাতে প্রভাবিত না হয়ে, বাস্তবতা অনুসন্ধান করে নিজে সতর্ক হওয়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তা অবগত করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়াল বলেন, ‘যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো সংবাদ পৌঁছে, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। যদি তারা সংবাদটি রাসূল সা. বা তাদের শাসকদের দৃষ্টিগোচর করত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মতো। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত, তবে সামান্য সংখ্যক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ শুরু করত।’ -সুরা নিসা : ৮৩।
উক্ত আয়াতে গুজব রটানোকে শয়তানের ঘৃণ্য কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ গুজবের কারণে মানুষের জানমালের ক্ষতি এমনকি প্রাণহানিরও আশঙ্কা থাকে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘শয়তান মানুষের আকার ধারণ করে লোকের কাছে আসে এবং তাদের মধ্যে মিথ্যা কথা প্রচার করে। ফলে তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্য হতে কোনো লোক বলে ওঠে যে, আমি এক ব্যক্তির কাছে এরূপ বলতে শুনেছি, তার চেহারা দেখলে চিনি, কিন্তু তার নাম বলতে পারি না।’ – সহীহ মুসলিম
.
গুজব রটনা ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার সম্পর্কে আল্লাহপাকের ঘোষণা, হুশিয়ারি এবং রাসূল সা.-এর স্পষ্ট হাদীসগুলো বিচার-বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, গুজব রটনাকারীরা এই শয়তানি নীতিরই অনুসরণ করে থাকে। সুতরাং, গুজবে কান না দেয়া, গুজবে বিশ্বাস না করা। আর যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা করে সংবাদ পরিবেশন, প্রচার ও প্রকাশ করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আল্লাহ পাক আমাদেরে গুজব নামক আজাব ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা থেকে হেফাজত করুন।
লেখক: বি.এ (অনার্স), এম.এ, এম.এম