জ্বরে রাস্তায় ছটফট করে মৃত্যু, ভয়ে পাশে আসেনি কেউ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:১৭:৫৬,অপরাহ্ন ১১ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৩৯৯ বার পঠিত
ফরিদপুর থেকে সংবাদদাতা:: ফরিদপুরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাস্তার ধারে সারাদিন কাতরানোর পরেও করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউ। খবর পেয়ে প্রশাসনের লোকজন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায়। মৃত ওই ব্যক্তির নাম আবদুস সামাদ মণ্ডল (৪৮)।
আবদুস সামাদের বাড়ি যশোরের খাজুরা এলাকায় বলে জানা গেছে। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন।
শনিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে আবদুস সামাদের মৃতদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালের লাশ ঘরে রাখা হয়। তার দাফনের জন্য এখনো কোনো স্বজনের সন্ধান মেলেনি।
মধুখালী উপজেলার কামারখালী বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, আবদুস সামাদ কামারখালীতে এসেছিলেন দিনমজুরের কাজ করতে। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি একটি ভ্যানযোগে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন।
তবে পথিমধ্যে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের মাঝিবাড়িতে একটি জুট মিলের সামনে তাকে রাস্তার পাশে একটি গর্তের ধারে ফেলে রেখে যায় ওই ভ্যানচালক।
এভাবে সারাদিন ওই গর্তের ধারেই পড়ে ছিলেন মুমূর্ষু আবদুস সামাদ। ওই পথ দিয়ে অনেকেই যাতায়াত করলেও কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি করোনা আক্রান্ত সন্দেহে। খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে সেখান যান মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ।
মধুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, লোকটি ভ্যানযোগে হাসপাতালে আসার পথে তাকে করোনা রোগী সন্দেহে পথে ফেলে যায় ভ্যানচালক। এরপর তিনি একটি গর্তের ধারেই পড়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় এভাবে পড়ে থাকার পর খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে আমরা ওই রোগীকে ফরিদপুর থেকে আসা বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সযোগে ফমেক হাসপাতালে পাঠাই।
মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মানোয়ার জানান, অসুস্থ ওই ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন বলে তাকে ফমেক হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে পাঠাই। তবে ফরিদপুর থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্স আসতে অনেক রাত হয়ে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রেজা বলেন, জ্বরে আক্রান্ত আবদুস সামাদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার সুযোগ ছিল না সতর্কতার কারণে। তাহলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ১৪ দিন সাধারণ রোগী বহন করতে পারতো না।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. জুয়েল জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা করে তাকে মৃত পাই।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনা সন্দেহে কেউ রোগীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি বলে জেনেছি। সেখানেই তিনি মারা যান।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান জানান, রাতেই আমরা ওই মৃত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করি। আজ সকালে এসব নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।