নবগঠিত সার্চ কমিটির কাছে সৎ যোগ্য নির্বাচন কমিশন আশা করা যায় না-বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩৪:৪৫,অপরাহ্ন ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ৭৬৮ বার পঠিত
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) পাঁচ সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটি বলছে, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাঁদের নিরপেক্ষ বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই। আর এই কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ, সৎ, সাহসী, যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনার হবেন এমন আশা করাও বাতুলতা। শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অনুসন্ধান কমিটি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই কমিটি বিএনপি প্রত্যাখ্যান করছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা প্রত্যাখ্যান করা বা না করার কোনো বিষয় নেই। নির্বাচন কমিশন গঠন করার পরে প্রত্যাখ্যান করা বা না করার বিষয় আসতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন মাননীয় বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের বার গঠিত অনুসন্ধান কমিটিরও প্রধান ছিলেন তিনি। সেই কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গঠিত হয়। বর্তমান ইসি অযোগ্য, মেরুদণ্ডহীন, বিতর্কিত। আগের অনুসন্ধান কমিটির প্রধানকে নতুন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান করার অর্থ—সরকার আরেকটি অনুগত ও অযোগ্য ইসি করতে চায়।
বিএনপির মহাসচিব দাবি করেন, অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবী হিসেবে বহুল পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা ডা. আখলাকুর রহমান আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। আরেক সদস্য সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ছিলেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনকে নিয়মসিদ্ধ করার পুরস্কার হিসেবে অবসরের পর তাঁকে পিএসসির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তিনি সরকারের ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।
অনুসন্ধান কমিটির একমাত্র নারী সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার। তাঁর সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা হিসেবে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর বাবা আফসার কামাল চৌধুরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। শিরীণ আখতার নিজেও কক্সবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ছিলেন।
অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ। তাঁর সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক সরকারে অধীন একজন সরকারি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ। তিনি সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। অর্থাৎ, সরকারের ইচ্ছা পূরণে তিনিও কোনো বাধা নন।
এই কমিটি গঠনকে আগামী নির্বাচন প্রভাবিত করতে সরকারি ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল দেশবাসীকে সতর্ক হতে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও অন্য অনেক দলের যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সবসময় জাতিসংঘের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এসেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নেয় এই সরকার সেই উদ্যোগের আশ-পাশ দিয়েও যায় না। এ রকম উদ্যোগ গ্রহণ করতে তাদের বাধা দেয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, তোফায়েল আহমেদ বিএনপিকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। এসব কথাবার্তা বলে তারা বিএনপিকে ভুল পথে পরিচালিত করতে চান। কিন্তু বিএনপি সেদিকে যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইসি গঠনে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নির্দেশে এই কমিটি করে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।