দারিদ্রতা: মা সন্তানকে ৭০ হাজারে বিক্রি করে পেলেন ৪০ হাজার!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০১:৫২,অপরাহ্ন ০৮ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৫৪৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: পৃথিবীতে সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা। যে মা দশ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করে পৃথিবীতে সন্তানকে আলোর মুখ দেখান, সেই মাই কিনা অভাবের তাড়নায় পাঁচ মাসের ছেলে সন্তানকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিলেন।
মাত্র ৭০ হাজার টাকায় বুকের ধনকে বিক্রি করলেও অসহায় ওই নারীর ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। বাকি ৩০ হাজার টাকা চলে গেছে দুই দালালের পকেটে। দালাল চক্রের বাণিজ্যের ঘটনাটি সোমবার জেলার বানারীপাড়া পৌর শহরে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
সূত্রমতে, বানারীপাড়া পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যাক্তা হতদরিদ্র পারভিন বেগম অন্তঃসত্বা হওয়ার তিন মাসের মধ্যে স্বামী নুরুজ্জামান অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। ফলে নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেয় পারভিন। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ মাস পূর্বে পারভিন একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।
পারভিন বেগম বলেন, কয়েকদিন পূর্বে একই এলাকার কাসেম মোল্লার পুত্র আনোয়ার হোসেন ও তার সহযোগি সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের আহমদাবাদ বেতাল গ্রামের মো. সালেক তাকে বিভিন্ন ধরনের প্ররোচনা দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আহমাদাবাদ বেতাল ক্লাব সংলগ্ন ফরাজী বাড়ির বাসিন্দা প্রবাসী গাফ্ফার ফরাজীর নিঃসন্তান স্ত্রী নাছরিন আক্তারের কাছে শিশুটিকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
পরে সন্তানের বিনিময়ে পারভিন বেগমকে ওই দালাল চক্র ৪০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেয়। এমনকি সন্তান বিক্রির বিষয়টি পাকাপোক্ত করতে দুই দালাল নাছরিন আক্তারের পক্ষে বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নোটারি পাবলিক আদালতের নাম লেখা একটি স্ট্যাম্পে পারভিনের স্বাক্ষরও নিয়েছেন।
প্রবাসীর স্ত্রী নাছরিন আক্তার বলেন, মানুষ কখনো বিক্রি হয় না। শিশুটির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছি এবং শিশুর গর্ভধারিণী মা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় আনোয়ার ও সালেকের মাধ্যমে তাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন বলেন, ৪০ হাজার টাকা পারভিনকে দেয়া হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার টাকার বিষয়ে আমি অবগত নই। এ বিষয়ে সালেক ভালো বলতে পারবে।
তবে সালেক দাবি করেন, পারভিনকে দেয়ার জন্য তিনি ৬০ হাজার টাকা এনে আনোয়ারের কাছে দিয়েছেন। আনোয়ার পারভিনকে কতো টাকা দিয়েছে তা তিনি জানেন না।
অপরদিকে দালাল চক্রের প্ররোচনায় অসহায় পারভিন বেগম একমাত্র পুত্র সন্তানকে বিক্রি করলেও এখন তাকে (পুত্রকে) ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। তিনি তার সন্তানকে ফিরে পেতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
জানতে চাইলে পারভীন বেগম বলেন, কয়েকদিন আগে আনোয়ার হোসেন ও সালেক বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার বুকের ধনকে বিক্রি করে দেয়। এরপর আমাকে ৪০ হাজার টাকা দেয় তারা। এখন আমি কার কাছে যাব, কি করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি আমার সন্তানকে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বানারীপাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. খলিলুর রহমান বলেন, সন্তান বিক্রির কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।