‘শপথ দুরে থাক, সংসদের পাশ দিয়েও যাবেন না বিএনপির নির্বাচিতরা’
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৪:১৯,অপরাহ্ন ২১ এপ্রিল ২০১৯ | সংবাদটি ৩৩২ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ না নিতে সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বলেছেন, ‘শপথ দূরে থাক সংসদের আশেপাশে নির্বাচিত কেউ হাঁটবে না। সংসদের আশপাশ দিয়ে হাঁটলে দেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করার সুযোগ পাবে না।’
রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, ‘৩০০ আসনে কেউ জয়লাভ করেনি, সুতরাং ৩০০ আসনে কেউ পরাজিতও হয়নি। কারণ জনগণ নির্বাচনে ভোট দেয়নি। নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে জনগণ। সুতরাং আমরা পরাজিত হইনি। যারা আছে তারা নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের মাধ্যমে ভোট চুরি করে আছে। এই চুরিকৃত ভোটের ফলাফল জনগণ মানতে পারে না।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আদর্শের কর্মী যারা মনে করে তারা জয়লাভ করেছে, আমি বিশ্বাস করি তারা সংসদে যাওয়া তো দূরের কথা, তার আশেপাশে কেউ হাঁটবে না। কারণ তারা সংসদের আশপাশ দিয়ে হাঁটলে বাংলাদেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করার সুযোগ পাবে না। দলীয় নেতাকর্মীদের কথা বাদই দিলাম।’
‘নেত্রী জেলে থাকবে আর আমরা সংসদে গিয়ে মজা নেব, শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করব, এমন ব্যক্তি বিএনপিতে আছে কি না আমার জানা নেই। যদি থাকে যথাসময়ে যথাযথ উত্তর তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আজকের আন্দোলন শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন না, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে হটানো সম্ভব এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘সরকারকে না হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় এবং আমাদের নেত্রীকেও মুক্ত করা সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি, বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী। তিনি আপস করতে জানেন না। নেত্রী জেলে থাকবে আর আমরা বাইরে থাকব, জেলে যাওয়ার ভয়ে আন্দোলন করতে পারব না- আমাদের এই সিদ্ধান্ত পরিহার করতে হবে।’
নিজেদের ব্যর্থতার কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে যে মামলা বাংলাদেশের আইনের সব শাখায় তার সাত দিনের মধ্যে জামিন হওয়ার কথা। সেখানে তিনি আজকে এক বছর চার মাস ধরে নির্জন কারাগারে একা রয়েছেন। এটা জাতির কাছে অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। আমাদের ব্যর্থতা আমরা সেভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম সৃষ্টি করতে পারিনি ওনার মুক্তির জন্য।’
বুলু বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে জাতির মুক্তির জন্য আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম কিন্তু পৃথিবীর মানুষ দেখল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে কীভাবে আগের দিন ভোট হয়ে যায়। প্রশাসন কীভাবে ভোট লুট করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর মানুষ সেটা দেখল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা যারা বলেন, বাক-স্বাধীনতার কথা যারা বলেন, তারা ২৯ তারিখ কীভাবে ভোট লুট করেছে?’
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘শবে বরাতের রাতে আজকে আমরা দোয়া করব যেন আমাদের নেত্রী আইনি প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত পান।’
বুলু মনে করেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিলে, গণভোট হলে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পাবেন খালেদা জিয়া। আর আজকে যদি ভোট হয় তাহলে আওয়ামী লীগ ২০-২৫টির বেশি আসন পাবে না। এজন্য নির্বাচনের আগের দিন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোট করে তারা নিজেরা রায় ঘোষণা করেছে।’
বর্তমান সরকারকে অবৈধ দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারের অধীনে আমাদের ছয়জন কীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আমরা জানি না, কারণ দেশে ভোট হয় নাই। তাই আমরা বলতে চাই এই ছয়জন সংসদে গিয়ে এই অবৈধ সংসদকে বৈধতা দেবে না-এটাই বিএনপির সিদ্ধান্ত।’
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আক্তারুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।