করোনা ভাইরাস অজুহাতে অস্থির পেঁয়াজ-রসুন-আদা বাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৬:২৩,অপরাহ্ন ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৯৫৪ বার পঠিত
বিশেষ রিপোর্ট:: চীনে করোনা ভাইরাসের অজুহাতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে নগরীর ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কমপক্ষে ১০ টাকা, রসুন ৩০ টাকা এবং আদার দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, চীনে করোনা ভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে আমদানিকারকরা বাজারে এই তিনটি পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতেই তৈরি হয়েছে সঙ্কট।
সিলেটের বিভিন্ন কাঁচাপণ্যের আড়তগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চীনা আদা ও রসুনের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সপ্তাহ আগে চীনা আদার দাম ছিল ১০০ টাকা। যা ৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। রসুনের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চীন থেকে আমদানি হওয়া শুকনো আদার দাম। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল তা এখন বেড়ে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমদানিকারকরা জানান, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর মিয়ানমার এবং চীন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মূল ভরসা। আর আদা-রসুনের মূল বাজারই হলো চীন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত চীনের বাজার ব্যবস্থা। এ অবস্থায় চীন থেকে জাহাজীকরণ বন্ধ থাকায় আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। যদিও চীনে নববর্ষের ছুটির কারণে গত ২০ জানুয়ারি থেকেই দেশটির আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ দিয়ে প্রতিদিন মিয়ানমারের কমপক্ষে ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢোকে। প্রতি ট্রাকে ১৩-১৪ টন করে পেঁয়াজ থাকে। চীনের পেঁয়াজ ঢুকে ৪-৫ ট্রাক। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে চীনের কোনো পেঁয়াজ বাজারে আসছে না। আমরা শুনেছি চীনে করোনা ভাইরাসের কারণে শিপমেন্ট বন্ধ আছে। যারা আগে এলসি খুলেছিল তাদের চালানও আসছে না। নতুন করে কেউ এলসিও খুলতে পারছে না।
দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। অর্থাৎ মাসে ২ লাখ টন ও দিনে প্রায় ৭ হাজার টন, যার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে মেটাতে হয়। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে চরম ঘাটতি দেখা দেয়। কারণ বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগই আসে ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলসীমান্ত দিয়ে। এর বাইরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আসে মিয়ানমারের পেঁয়াজ। তবে তা পরিমাণে খুবই কম।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজের মাধ্যমেও পেঁয়াজ আসে, যার পরিমাণ খুবই নগণ্য বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্যই বাজারে গুজব ছড়িয়েছে যে চীন থেকে পণ্য আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। এভাবে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গত এক সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কয়েক ধাপে বাড়িয়েছেন।’
কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফার জন্য সবসময় বিভিন্ন অজুহাত খোঁজে। করোনা ভাইরাসও তেমনি একটি অজুহাত। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত বিকল্প বাজার তৈরি করে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা।’
প্রসঙ্গত, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর দেশের বাজার নির্ভর হয়ে পড়ে মিয়ানমার ও চীনের ওপর। কিছুদিন আগেও মিয়ানমার ও চীন থেকে পেঁয়াজ এনে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে চীনের পেঁয়াজ সরবরাহ এক প্রকার বন্ধই রয়েছে। এতে প্রভাব পড়েছে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দামেও।
গত বছরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে তা বিশ্বের ২৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এতে এ পর্যন্ত চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা চারশ ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে মানুষ থেকে মানুষে নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর আসতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারি এ ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।