বিএনপির বিরুদ্ধেও শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দিলেন কাদের
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১৪:২৩,অপরাহ্ন ২৭ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৪০১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: শুধু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নয়, বিএনপির যেসব নেতাকর্মী ক্যাসিনো-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দি কিং অব চিটাগাংয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ছয়টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযান শুধু আওয়ামী লীগের লোকের বিরুদ্ধে নয়, এ অভিযান সবার বিরুদ্ধেই চালানো হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা কে কি করছেন, কোথায় বসে কি অপকর্ম করছেন- সব খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সময়মতো টের পাবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ঘরটা শেষ করে পরেরটা ধরবেন। নেটের জালে সবার অপরাধ ধরা পড়বে। ইতোমধ্যে মোহামেডানের ডিরেক্টর খালেদা জিয়ার সাবেক প্রধান নিরাপত্তাকর্মী লোকমান হোসেনসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন এই ক্যাসিনো কাণ্ডে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন নিজের ঘর থেকে। বিএনপির ফখরুলরা বড় বড় কথা বলেন, অথচ তারা পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাদের কথা ‘ভূতের মুখে রাম রাম’। এই বিএনপিই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলে। লুটপাটের হাওয়া ভবন, না খাওয়া ভবন! দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মুচলেকা দিয়ে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে বিদেশ চলে গিয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর বিদেশে বসে বসে ষড়যন্ত্রের গুটি চালছেন। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছেন। বিএনপি একটা প্রমাণ দেখাক যে, দলের অপরাধীদের একজনকেও তারা শাস্তি দিয়েছে। চট্টগ্রামে জামাল উদ্দিন হত্যার বিচার তার পরিবার পায়নি। অথচ বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে অপহরণ করেছিল। আমরা লোক দেখানো শুদ্ধি অভিযান করছি না। শেখ হাসিনা প্রমাণ করবেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি কত কঠোর।’
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না। দল যখন ক্ষমতায় থাকবে না, তখন কোথায় থাকবেন, কোথায় পালাবেন! আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। মানুষের ভালোবাসা হারিয়ে ফেললে বেঁচে থাকা দায়। তাই সময় থাকতে ভালো হয়ে যান। শুধু উন্নয়ন করলে হবে না। উন্নয়নের সঙ্গে ভালো আচরণও মানুষকে দিতে হবে। না হয় এত উন্নয়নের সুফল পাব না। নেত্রীর জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়, কিন্তু দল হিসেবে আমরা তার ধারেকাছেও নেই। এই কারণটা আমাদের সকলকে বুঝতে হবে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন এবং নেতাকর্মীদের ভালো আচরণ- এই নিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যেতে চায়।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে বলে যাচ্ছি, হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছি- চিহ্নিত চাঁদাবাজরা সাবধান হয়ে যান। টেন্ডারবাজ-ভূমিদস্যু-মাদক ব্যবসায়ীরা সাবধান হয়ে যান। শেখ হাসিনার অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। অপকর্ম করে কেউ পার পাবে না। নিজের লোককে শায়েস্তা করার সৎ সাহস শেখ হাসিনার আছে। ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলার রায় দেখেছেন। সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিরও ফাঁসির রায় হয়েছে। নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও আওয়ামী লীগ সরকার ছাড় দেয়নি।’
তিনি বলেন, আমাদের অনেক এমপিকেও দুদক নোটিশ দিয়েছে। কোনো কোনো সাবেক মন্ত্রীকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। একজন এমপি দণ্ডিত হয়ে জেলে আছেন। এক পৌরসভার মেয়রও কারাগারে আছেন। এমপি-মন্ত্রীদের আদালতে গিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে- তারা নিরপরাধ। আমরা আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করি না। আমরা কখনো দুদককে বলব না, অমুককে ছেড়ে দিন।
দলীয় সভানেত্রীর প্রশংসা করে সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা শুধু রাজনীতিক নন, তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক। রাজনীতিকরা চিন্তা করেন পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু রাষ্ট্রনায়কের চিন্তা পরবর্তী জেনারেশন নিয়ে। ভিশন ২০২১, ২০৪১ ও একশ’ বছরের মহাপরিকল্পনা নিয়ে শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ জিডিপিতে এশিয়ায় সবার শীর্ষে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরও এগিয়ে যাবে দেশ। আজকে বাংলাদেশ ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানকে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পেছনে ফেলেছে। এ কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। গত ৪৪ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয়, সাহসী ও দূরদর্শী নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। তিনি প্রমাণ করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে, অনিয়মের বিরুদ্ধে নিজের দলকেও ছাড় দেওয়া হবে না। এটাই হলো সত্য।