ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস, আজ সিদ্ধান্ত!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৯:১০,অপরাহ্ন ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৫৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হওয়ার বছর পেরোতে না পেরোতে ভাঙনের মুখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এই পুনর্গঠন কিংবা নতুন সম্মেলনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের লাগাম টেনে ধরতে শনিবার বৈঠকে বসছে মূল দল আওয়ামী লীগ। দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও বিভিন্ন সময় তাদের ব্যর্থতা ও অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী প্রধানমন্ত্রীর বরাবর চিঠি লিখে এ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে তাদের ব্যর্র্থতার জন্য দলের ও সংগঠনের সাবেক কিছু নেতার ষড়যন্ত্র ও প্রপাগান্ডাকেও দায়ী করেছেন তিনি।
রাব্বানীর ভাষ্য, দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই চতুর্মুখী চাপ, সদ্য সাবেকদের অসহযোগিতা, নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা আর জ্ঞাত-অজ্ঞাত কিছু ভুল ইতিবাচক পরিবর্তনের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে। তিনি চিঠিতে একাধিকবার ক্ষমা চেয়েছেন নেত্রীর কাছে।
এই দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। ছাত্রলীগের কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, বিতর্কিত, বিবাহিতদের পদ দেওয়া, ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
তাই ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে ভীষণ অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৮ সেপ্টেম্বর দলের নির্বাচনী বোর্ডের সভায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা বলেন। সেদিন গণভবন গিয়েও শোভন ও রাব্বানী প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে ফিরে আসেন। শেষবারের মতো গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে গণভবনে প্রবেশ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন তারা। সেদিনই শোভন-রাব্বানীর গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত করে গণভবন। এরপর মঙ্গলবার গভীর রাতে কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেলের সঙ্গে বৈঠক করেন ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা।
দলের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই ছাত্রলীগের বিষয়টি দেখছেন তাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বর্তমান কমিটির বিষয়ে সুপারিশ করতে চাইছেন না। সংগঠনটির দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতারামহ সিনিয়র নেতারাও নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখছেন। নেত্রীর দোহাই দিয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসছে। সেখানে ছাত্রলীগ নিয়ে আলোচনা হবে। বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়ে শীর্ষ দুই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানায়।
আওয়ামী লীগের এককজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যেকোনো মুহূর্তে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসতে পারে। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড কাজ করছে বলেও তার দাবি।
আগাম সম্মেলন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, নাকি আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা জানান, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউকে কার্যকরী সভাপতি করে দায়িত্বভার অর্পণ করা হতে পারে। তবে সম্মেলনের দিকে আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে যাবে না বলেই তার বিশ্বাস। তবে শনিবারে (আজ) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠকে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব বা আগাম সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটির বিষয় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দেখভাল করছেন। কোনো বিষয় সিদ্ধান্ত আকারে না আসার আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার মন্তব্য করা সমীচীন হবে না বলে মনে করি।’
ছাত্রলীগের আগাম সম্মেলন হবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশে দলটির সাধারণ সাম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আগাম সম্মেলনের কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। এটি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিষয়টি নেত্রী নিজেই দেখছেন, যা করার তিনিই করবেন। নেত্রী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, এ ছাড়া দলের চারজনকে ছাত্রলীগের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিজেদের দোষ স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। শোভন-রাব্বানীর কমিটি বিলুপ্তির খবর এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরই মধ্যে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে ব্যার্থ হয়ে নেত্রীর কাছে এক আবেগঘন চিঠি লিখেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। চিঠিতে রাব্বানী লিখেন, ‘আপনি বিশ্বাস করে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির যে পবিত্র পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলাম। দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই চতুর্মুখী চাপ, সদ্য সাবেকদের অসহযোগিতা, নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা আর আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত কিছু ভুল ইতিবাচক পরিবর্তনের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে।’ তিনি চিঠিকে একাধিকবার ক্ষমা চেয়ে চিঠিরে শেষাংশে নেত্রীকে লিখেছেন, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, মানবতার মা। নিজ বদান্যতায় আমাদের ক্ষমা করে ভুলগুলো শুধরে আপনার আস্থার প্রতিদান দেওয়ার সুযোগটুকু দিন। আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে যাবার কোনো জায়গা নেই।’
গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ এক বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে উঠে আসে শত শত অভিযোগ। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা বিভিন্ন সময় উঠে আসে।