সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট জোটভোটের বিতর্কে
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩০:২৫,অপরাহ্ন ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ৭৬৮ বার পঠিত
নৌকা প্রতীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে পরাজিত হওয়ার প্রবীন রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন মানুষের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় দেশের রাজনীতির মধ্যাকাশে উজ্বল নক্ষত্র। তিনি জাতীয়তাবাদী ধারার দলগুলোর মধ্যমনি। পদ-পদবিকে তুচ্ছজ্ঞান করায় গোটা বিশ্ব এখন তার দিকে তাকিয়ে।
অথচ সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর অবস্থান বিপরীত মেরুতে। ক্ষমতার মোহে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের আদর্শ শিঁকেয় তুলে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির জোটে গিয়ে নিজেদের দলের ভিতরে বিতর্কিত হচ্ছেন। দেশের মানুষের কাছে সমালোচিত হচ্ছেন। আদর্শ নীতি নৈতিকতাকে দূরে ঠেলে নৌকায় উঠার প্রাণান্তকর চেষ্টার পর মহাজোটে এইচ এম এরশাদ পেয়েছেন মাত্র ২৬ আসন। আর দেড়শ সীটের স্বপ্ন দেখেও বি চৌধুরী পেয়েছেন ৩টি আসন। দলীয় নেতাকর্মীদের হাত থেকে বাঁচতে অসুস্থ এরশাদ ছেলে ভুলানোর মতো প্রচার করছেন তাঁর দল ১৬১ আসনে ভোট করবে। মূলত তিনি যে ২৬ আসন পেয়েছেন তাতে ৫ থেকে ৬টি আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভাবনা থাকলেও অধিকাংশ আসনে জামানত রক্ষা করাই কঠিন হবে। তবে দলের আরো ১৩৫ জন প্রার্থী নৌকা-ধানের শীষের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে থাকবে।
রাজনীতির বাজিকর এরশাদ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নাটক করে স্ত্রীর অধীনে রাজনীতি করতে বাধ্য হন। এবার তিনি অসুস্থ হয়ে ভয়ে বাসায় থাকতে না পেরে সিএমএইটএ থাকেন। দলের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলায় দলের মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে অপসারণ করে ওই পদে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বসান। এক সাপ্তাহের মধ্যেই আবার নিজের সব ক্ষমতা তুলে দেন রুহুল আমিন হাওলাদারের হাতে। এখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যজন বি চৌধুরী পরিচ্ছন্ন রাজনীতির পথের মানুষ। ২০০৫ সাল থেকে নানা সময় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মিলে পরিচ্ছন্ন দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতিতে জনগণকে উৎসাহিত করতে বহু কর্মসূচি পালন করেছেন। কয়েক বছরে ডা. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী দুই দফায় রাজনীতির ইস্তেহার তৈরি করে সারাদেশ ঘুরে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও সমাবেশ করেছেন। দুই শীর্ষ নেতার যৌথ ইস্তেহার পড়ে অনেকেই তাদের দিকে ঝুকে যায়। নিকট অতীত ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী যৌথভাবে রব-কাদের সিদ্দিকী-মান্না-সুলতান মনসুর-জিএম কাদেরকে নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক করেন। কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসা, বি চৌধুরীর বারীধারার বাসা ও রবের উত্তরার বাসার অনেকগুলো বৈঠকের খবর পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। সবশেষে বি চৌধুরী যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন আ স ম আবদর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে। অতপর কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট মিলে গুলিস্তান নাট্টমঞ্চে ঐতিহাসিক সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশে বি চৌধুরী ও কামাল হোসেন একই সুরে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের হাত থেকে দেশ উদ্ধার করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অঙ্গিকার করেন। এ জন্য জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলনে হাতে হাত মেলান। কিন্তু বি চৌধুরীর পুত্র মাহী বি চৌধুরী হঠাৎ বিএনপির সঙ্গে জোট করতে স্বাধীনতা বিরোধীদের বাদ দেয়া এবং দেড়শ আসন চান। এ নিয়ে অনেক পানি ঘোলা করা হয়। বাস্তবে দেখা যায় বি চৌধুরী যে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান সেই দলের দ্বিতীয় ব্যাক্তি মহাসচিব মেজর (অব) আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ভুরি ভুরি সুনিদৃষ্ট অভিযোগ। দেড়শ আসন না পাওয়ায় ঐক্যফ্রন্টে না গিয়ে যুক্তফ্রন্টের শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে ন্যাপ ও এনডিপিকে ভাগিয়ে নিয়ে যুক্তফ্রন্টে অন্তভূক্ত করেন। দেশবাসীকে চমক দেখিয়ে বিএনপি থেকে পরিত্যাক্ত শমসের মবিন চৌধুরী সিলেটে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সরোয়ার মিলন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলাউদ্দিন আল আজাদকে দলে নিয়ে আসেন। অতপর নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিভিন্ন দাবি দাওয়া করতে থাকেন। নির্বাচনের প্রার্থী দেয়ার দেন-দরবারে দেড়শ আসনের বদলে ৫১ আসনে মনোনয়ন দাবি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষীপুর-৪ মেজর (অব.) এম এ মান্নান, মুন্সীগঞ্জ-১ মাহী বি চৌধুরী এবং মৌলভীবাজার-২ এমএম শাহীন তিন আসন নিয়ে খুশি থাকতে হয়েছে। যে সব দল ও ব্যাক্তিকে মহাজোটের মনোনয়ন দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্টে নিয়ে আসেন তারা এখন প্রবীন এই নেতাকে তুলোধুনো করছেন।
অন্যদিকে নাটক-সিনেমা ক্যারিকেচা করে আওয়ামী লীগের অনুকম্পায় মহাজোট থেকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন দেয়া হলেও প্রচার করা হচ্ছে ২৯ আসন। আসনগুলো হলো- নীলফামারী-৩ আসন মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, রংপুর-১ মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কুড়িগ্রাম-১ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ মোঃ নুরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ এ্যাড. আলতাফ আলী, বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতনা, পিরোজপুর-৩ ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, টাঙ্গাইল-৫ শফিউল্লাহ আল মুনির, ময়মনসিংহ-৪ বেগম রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, সিলেট-২ ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধা, ফেনী-৩ লেঃ জেঃ (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী,লক্ষীপুর-২ মোঃ নোমান, চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এসব আসনের আবার কয়েকটি আওয়ামী লীগের পছন্দের প্রার্থীকে লাঙ্গল প্রতীক দিতে বাধ্য হয়েছেন এরশাদ।
এইচ এম এরশাদ, বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন তিনজনই দেশের সিনিয়র সিটিজেন। দেশের মানুষ তাদের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু জনগণের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে প্রেসিডেন্ট পদে ভোট করে পরাজিত ড. কামাল হোসেন যখন হিরো; তখন সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট এইট এম এরশাদ ও বি চৌধুরী দলের নেতাকর্মীদের কাছেই বিতর্কিত। শুধু তাই নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-ব্লগ-টুইটারে সাবেক দুই প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যে তর্কবিতর্ক হচ্ছে তা কারো জন্যই সম্মানজনক নয়।