করোনায় হতাশ না হয়ে ইতিবাচক থাকুন
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২১:২৫,অপরাহ্ন ২২ মে ২০২০ | সংবাদটি ৬৩১ বার পঠিত
।। ডা. মাহফুজ আনাম মুরাদ ।।
“বিশ্বাস আর আশা নাই যারবেঁচেও সে মড়া,জ্যান্ত সে মরিয়াছেশয়তান তারে শেষ করিয়াছেঈমান লয়েছে কেড়েপরান গিয়াছে মৃত্যুপুরীতেভয়ে তার দেহ ছেড়ে”—–কাজী নজরুল ইসলাম
নিরাশ মানুষ আক্ষরিক অর্থে মরার আগেই মরে।মৃতপ্রায় নিরাশ মানুষেরা জীবন্ত দেহে বোঝাস্বরুপ জীবনকে কেবল বয়ে বেড়ায়।এ জীবন কখনো উপভোগের নয় বরং নৈমিত্তিক কাজ করা,জীবন ও সংসারের ভার বহন করে চলা ছাড়া অন্য কিছু নয়।মৃত্যুবদি জীবনকে উপভোগ করা,রোগ শোকের বিপরীতে প্রাণোচ্ছল থাকার কোন ঔষধপথ্য পৃথিবীতে আবিষ্কার হয়নি।কারণ সুখের মূল কিন্তু মনোদৈহিক।সর্বদা ইতিবাচক ও শোকরগোজার থাকা পার্থিব জীবনে যেকোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সামাল দিতে অব্যর্থ নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ দেয়।যেকোন রোগে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়
সতর্কতা ও মনোবল দৃঢ় রাখা তথা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশিই জরুরি।
কিছু অভিজ্ঞতা থেকে বলতে গেলে ৪র্থ বর্ষের প্রথম দিকে আমাদের ওয়ার্ড প্লেইসমেন্ট ছিলো অর্থোপেডিক্স ডিপার্টমেন্টে,সকাল বেলা যখন স্যাররা রাউন্ডে যেতেন তখন স্টুডেন্টদের সাথে রাখতেন। তখন আমরা দেখতাম স্যাররা রোগীর বেডের পাশে দাড়িয়ে অনেক মোটিভেশন দিতেন এবং রোগীর কাছে থেকে যাবার সময় বলতেন,” চিন্তা করবেন না ভালো হয়ে যাবেন “। তখন ভাবতাম এতে করে কি সত্যি রোগীর মনোবল দৃঢ় হয়?কিংবা রোগ প্রতিরোধে স্যারদের ইতিবাচক কথা আদৌ কোন কাজ দেয়?সময় যতো গড়ায় অভিজ্ঞতা ততো সমৃদ্ধ হতে থাকে এখন বিশ্বাস হয় স্যারদের মোটিভেশন রোগীদের সুস্থ হওয়ায় অনেক বড় ভূমিকা রাখে। একদিন সকালে স্যারদের রাউন্ডের সময় দেখলাম একজন রোগী প্রফেসর স্যারকে বলছেন ,”স্যার আফনারে দেখলে আমি অর্ধেক ভালা অই যাই “(স্যার আপনাকে দেখলে আমি অর্ধেক ভালো হয়ে যাই)।আমি যেহেতু সিলেটি তাই সিলেটি রোগীদের কেবল ভাষাই নয় তাদের ভাব ও আবেগ হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারি।ডাক্তারদের পজিটিভ কথায় তারা সাহস পান।রোগের বিরুদ্ধে মানসিকভাবে লড়ে যাবার যে সাহস ও মনোবল আমি দেখি;আমার বিশ্বাস তাদের এই মনোশক্তি ঔষধের সহায়ক হিসেবে কাজ দেয়। এ সবই পাশে থেকে দেখা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলা।
রোগ শোকে সবারই উচিত পজিটিভ চিন্তাভাবনা করে মনোবল শক্ত রাখা। পরিবারপরিজন, পাড়া পড়শিকে করোনার বিরুদ্ধে ইতিবাচক মনোবল তৈরিতে সহায়তা করা। কিন্তু বর্তমান সংকটময় সময়ে দেখছি বেশির ভাগ মানুষই এমনভাবে চারপাশের মানুষকে সতর্ক করছেন যার ফলে তাদের চাঙ্গা হওয়ার পরিবর্তে মনোবল ভেঙে যাচ্ছে।বর্তমানে অনেক জায়গায় দেখলাম করোনা বিজয়ী ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবল শক্ত রাখার জন্য ।কিন্তু আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এমনকি পরিচিত অনেককেই দেখলাম সতর্কবার্তা তারা এমন ভাবে প্রচার করছেন মনে হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হলেই আপনি মৃত্যুবরন করবেন।অর্থাৎ তাদের সতর্কবার্তার প্রতিপাদ্য হচ্ছে আপনি করোনাক্রান্ত সুতরাং আপনার মৃত্যু অবধারিত।
দৈনিক ফোকাস করা হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিকে। কিন্তু সুস্থতার কথা কাউকেই তেমন ফোকাস করতে দেখি না।করোনাক্রান্ত বয়োবৃদ্ধ বহু লোক করোনা জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। করোনা প্রতিরোধে লকডাউন বাংলাদেশর প্রেক্ষাপটে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ভীবিষিকা।বাংলাদেশের মতো দেশে কাউকেই ৩-৪ মাস বাসায় রাখা যাবে না। আমরা এতো উন্নত দেশ হই নাই যে ঘরে বসে থাকলে পেটে খাবার আসবে। এর মধ্যে দেশে চোর বাটপারের অভাব নাই। মহামারীতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রান নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদগনের লোভ লালসা,গরীবের ত্রান আত্মসাত সবই আমাদের জানা।বন্ধুদের সতর্কতামূলক প্রচারনা প্রসঙ্গে আসছি আবারো।
মানছি সতর্ক করা উচিত কিন্তু কেউ সতর্ক থাকার পরও করোনা আক্রান্ত হবেনা তেমন নিশ্চয়তা শতভাগ দেয়া সম্ভব নয়।যদি আক্রান্ত হয়েই যান তবে তো ভেঙ্গে না পড়ে মনোবল দৃঢ় রেখে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।মরার আগে মরে যাওয়ার কোন মানে হয় না।মনে রাখবেন মানসিক শক্তি ও ইতিহাচকতা আপনার এন্টিবডিকে রোগ নিরাময়ে কাজে লাগায়।করোনার বিরুদ্ধে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সমাজের শিক্ষিত সচেতন মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।আজই তো আমাদের দেশে সুস্থ হয়েছে ৪০৮ জন;এটা একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য হতে পারে মোটিভেশন যে তারও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।প্রচার প্রচারনা এমনভাবে করা হচ্ছে যে,যার করোনা পজিটিভ আসে তার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়।সে আপনাআপনিই নিরাশার চোরাবালিতে থলিয়ে যায়।করোনায় মরার আগে সে আমাদের নেতিবাচক অতি সচেতনতামূলক প্রচারনার বলি হয়ে মৃত্যুবরণ করে।আমাদের উচিত সতর্কতার পাশাপাশি সুস্থতা ও রোগ নিরাময়ে ইতিবাচকতাও হাইলাইটস করা।
যদি কারো করোনা পজিটিভও আসে যাতে সে লড়াই করার মনোবলটা না হারায়।
ডা. মাহফুজ আনাম মুরাদ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াসপুর, মোহাম্মদ মনসুর মেমোরিয়াল।