গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিটে ৫ মিনিটে ফলাফল!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৭:৩২,অপরাহ্ন ২৫ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ২০৪৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: পিসিআর পদ্ধতিতে ল্যাবে কোভিড-১৯ টেস্ট করতে যেখানে সময় লাগে দুদিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটে সেখানে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ মিনিট। টেস্টের ফলও আসবে শতভাগ নির্ভুল— এমনটিই দাবি করেছেন ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৫ এপ্রিল) ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের গেরিলা কমান্ডার মেজর এ টি এম হায়দার বীর বিক্রম মিলনায়তনে আয়োজিত কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি করেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, কিট উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.বিজন কুমার শীল, গবেষণা প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার কিট সম্পর্কে নিজেদের মতামত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
বিজ্ঞাপন
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আমাদের টেস্ট কিটে আমরা দুই ধরনের ফেজ ডেভেলপ করেছি। একটা হলো করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিজেন ডিটেকশন। আরেকটি হচ্ছে অ্যান্টিবডি ডিটেকশন। প্রত্যেকটা ইনফিউশনে দুটি ডোর থাকে। একটি হচ্ছে অ্যান্টিজেন বা ভাইরাল ফেজ আরেকটি হলো অ্যান্টিবডি।’
‘আমাদের সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট হলো- আমরা দুটি ফেজ একত্রিত করতে পেরেছি। ফলে আমরা শতভাগ রোগীকে শনাক্ত করতে পারব। এই টেস্ট খুব সহজ এবং স্বল্প সময়ে করা যাবে। যেখানে পিসিআর করতে দুদিন সময় লাগে সেখানে আমাদের এই কিটে টেস্ট করতে মাত্র ৫ মিনিট সময় লাগবে’— বলেন ড. বিজন কুমার শীল।
কিটের সহজ ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, এক সেট কিট বক্সে একটা ডিভাইস এবং দুই ধরনের বাফার থাকবে। ওই ডিভাইসের ভেতরে ক্যাপসারিন রিএজেন্ট দেওয়া আছে। ডিভাইসে প্রথমে একটি বাফার দুই ড্রপ দেওয়ার পরে সাসপেক্টেড স্যাম্পল দিতে হবে। ডিভাইস সেটি চুষে নেওয়ার পর আবার দুই ড্রপ বাফার দিতে হবে। এরপর আরেক ধরনের বাফার (যেটা মূলত গোল্ডপার্টিক্যাল) দুই ড্রপ দিতে হবে। যদি কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়, তাহেল দুটি ডট আসবে। আর যদি নেগেটিভ হয়, তাহলে একটি ডট আসবে। সবকাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট।
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘এই টেস্টের পটভূমি যদি বলি এটি শুরু হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। ২০০৩ সালে আমি যখন সার্স ভাইরাস নিয়ে কাজ করি, তখন ডট ব্লোট ডেভেলপ করি। তখন এর সময় ছিল ১৫ মিনিট। যখন এটাকে ডিভাইসে নিয়ে আসি, তখন এর সময় চলে আস পাঁচ মিনেটে।’
কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরেকজন গবেষক বলেন, ‘টেস্ট কিট নিয়ে বিতর্ক অনেক আছে। আমরা যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানী, বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছি তারা নানারকম বিতর্ক করে যাচ্ছি। পিসিআর পদ্ধতি ভালো। সেলুলজিক্যাল পদ্ধতি খারাপ!’
‘আমাদের বক্তব্য হলো, দেশের অর্থনীতিকে যদি রক্ষা করতে হয়, তাহলে এত লম্বা সময় ধরে, এত টাকা খরচ করে পিসিআর পদ্ধতিতে টেস্ট করা যাবে না। আমাদেরকে খুব সহজ পদ্ধতিতে যেতে হবে। ধরুন আমরা একটা ইন্ডাস্ট্রি খুলব। ইন্ডাস্ট্রিতে দুই হাজার লোক আছে। আমরা সেখানে কিট নিয়ে যাব। একদিনের মধ্যে টেস্ট করে বলে দেব, এখানে কে কে ইনফেক্টেড আছে’— বলেন ওই গবেষক।
তিনি বলেন, ‘এয়ারপোর্ট বা গাবতলীতে চেকপোস্ট বসাতে গেলে সেখানে পিসিআর নেওয়া যাবে না। কারণ, পিসিআর পদ্ধতিতে কাজ টেস্ট করতে হলে বড় ল্যাবরেটরি সেটআপ দিতে হয়। সহজ পদ্ধতিই আমাদের নিতে হবে। এই কারণেই ডব্লিউএইচও’, ‘সিডিসি’ সেলুলজিক্যাল টেস্টে যাওয়ার কথা বলছে। এখন কথা হলো- এই টেস্টে সেনসিটিবিটি কতটা হবে? এটা আসলে নির্ভর করছে বিজ্ঞানীরা কীভাবে বিষয়টি ডিজাইন করছে, সেটির ওপর। আমরা সেটি করতে সমর্থ হয়েছি।’