করোনা ভয়: নিহত অন্ত:স্বত্ত্বার লাশ ভাসছে নদীতে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৫:৩৪,অপরাহ্ন ০৯ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৪৯০ বার পঠিত
নরসিংদী থেকে সংবাদদাতা:: নরসিংদীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৬ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর লাশ ভাসছে নদীতে। স্বামীর বাড়ির লোকজন নৌকা দিয়ে নদীতে লাশ বাসিয়ে দিলেও নদী পাড়ে লাম পাহারা দিচ্ছেন নারীর পিতা।
নিহত অন্ত:স্বত্ত্বা নারীর নাম সুলতানা বেগম (৩৫)। তিনি একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। দীর্ঘদিন থেকে তিনি জ্বর, ঠান্ডা কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সকালে সদর উপজেলার মেঘনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ায় তিনি মারা যান। নিহত সুলতানা নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন।
তার নমুনা সংগ্রহের জন্য নরসিংদীর একটি স্বাস্থ্য টিম রওনা হয়েছে। এদিকে করোনার আক্রান্ত হয়েছে কিনা, সেই ভয়ে স্বামীর বাড়ি কাজির কান্দিতে লাশ দাফন করতে দেয়নি গ্রামবাসী। এমনকি মৃতের স্বামী আমানুল্লাকেও লাশের কাছে যেতে দিচ্ছে না তার স্বজনেরা। ফলে মেঘনা নদীতে নৌকায় ভাসসে তার লাশ। মেয়ের লাশ পাহারা দিচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা ফরিদ মিয়া।
জানা যায়, বেশ কয়েকদিন যাবৎ জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন সুলতানা। নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউনের পর বন্ধ হয়ে যায় শিল্প কারখানা। এরইমধ্যে গতকাল বুধবার তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে বুধবার রাতেই নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদীর আলোকবালীতে চলে আসেন। বৃহস্পতিবার তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে বটতলী এলাকায় ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার পরে সেখানেই মারা যান সুলতানা।
পরে তার লাশ স্বামীর বাড়ি কাজিরকান্দি গ্রামে নেওয়া হয়। কিন্তু করোনা উপসর্গ থাকায় গ্রামের লোকজন তাকে স্বামীর বাড়িতে দাফন করতে দেয়নি। পরে লাশ নিয়ে পুনরায় বাবার বাড়ি আলোকবালীতে চলে আসেন। সন্ধ্যায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লাশ নদীর ঘাটে নৌকায় পড়ে ছিল।
আলোকবালী গ্রামের বাসিন্দা সমির বলেন, করোনার আক্রান্ত হয়েছে কিনা, সেই ভয়ে স্বামীর বাড়ি কাজিরকান্দিতে লাশ দাফন করতে দেয়নি । মৃতের স্বামীকেও লাশের কাছে যেতে দিচ্ছে না তার স্বজনেরা। এখনো লাশ পড়ে আছে নৌকায়। লাশ পাহারা দিচ্ছেন মৃতের বাবা ।
নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, মৃত নারী শ্রমিকের নমুনা সংগ্রহের জন্য নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলের উদ্যেশে রওনা হয়েছেন। নমুনা সংগ্রহের পরই তার লাশ দাফন দেওয়া হবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত বিজয় ও দুলাল নামে দুই গার্মেন্টস শ্রমিক নিজ বাড়ি হাজিপুর এলাকায় আসলে গ্রামের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। পরে পুলিশ খবর দেওয়া হলে তারা পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে নরসিংদীতে এখন পর্যন্ত মোট তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবিলা ও সুরক্ষায় বৃহস্পতিবার থেকে নরসিংদী জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।