প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর, ভূলে ভরা মুক্তিযোদ্ধা তালিকা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৩:৫৭,অপরাহ্ন ১১ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৪৪৮৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হালনাগাদ করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। কিন্তু এ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা অসংখ্য ভূলে ভরা।
সম্প্রতি, গুরুত্বপূর্ণ তালিকার ভূল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি লেখা পোস্ট করেছেন ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ গ্রন্থসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, প্রবাসী সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর করে এ লেখাটি পোস্ট করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের এত বড় ভুল দেখার কি কেউ নেই?
বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হালনাগাদ করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হাতে নিয়ে আপনার আশপাশের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি এক নজরে দেখলে বুঝতে পারবেন ওই মন্ত্রণালয় আসলেই কি তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে?
স্বাধীনতাযুদ্ধে রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৭৬। স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় সংগ্রহ করতে পারেনি ওই মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের গেজেট কিংবা ওয়েবসাইটে এত ভুলের ছড়াছড়ি যে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা দেখেন কি না সন্দেহ হয়। এখানে সামান্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে আব্দুল মান্নান বীরবিক্রমের নম্বর ২১১ এবং তৌহিদ আলীর গেজেট নম্বর ২১২। কিন্তু সরকারের ২১২ নম্বর গেজেটে আব্দুল মান্নানের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তা ছাড়া গেজেটে আব্দুল মান্নানের বাবার ও জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি। গেজেটে মার্চ মাসের নামের বানানটি পর্যন্ত ভুল করে লেখা হয়েছে। রয়েছে ইংরেজি-বাংলার সংমিশ্রণ। স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীরযোদ্ধাদের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ২১২ নম্বর গেজেট, পৃষ্ঠা ১০৭৫, তারিখ ১১ মার্চ ২০০৪-এ নাম থাকার কথা ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার মুকিতলা গ্রামের তৌহিদ আলী বীর বিক্রমের। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নোয়াগ্রাম গ্রামের শহিদ কনস্টেবল আব্দুল মান্নান বীরবিক্রমের। এত বড় একটা ভুল একটি মন্ত্রণালয় করে যাচ্ছে, অথচ সেটি ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের ভুলের এই খেসারত দিতে হচ্ছে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গবেষণা করছেন তাঁদের।
২০১৬ সালে আমার লেখা ‘স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ গ্রন্থ প্রকাশের পর একজন বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমার নামে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। অন্য আরেকজন বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মামলা করেছেন তাঁর বাবার নাম বিকৃত করে ছাপানোর অভিযোগে। আমি বারবার তাঁদের বলেছিলাম এটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত। ওই গেজেটে যেভাবে ছাপা হয়েছে, সেভাবেই আমি ছাপিয়েছি। কিন্তু সে কথা তাঁরা মানতে নারাজ। ফলে আমাকে তাঁদের কাছে নাজেহাল হতে হয়েছে। পরিশ্রম করে বই লিখে কোর্ট কাছারি করতে হচ্ছে।
আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশে ৬৭৬ জন রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় যারা নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি, তারা লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় কীভাবে সংরক্ষণ করছে, সেটি আল্লাহ পাকই জানেন।