সিলেট শাহী ঈদগাহ’র পবিত্রতা নষ্টের সাথে বিনষ্ট হচ্ছে ঐতিহ্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৬:০৭,অপরাহ্ন ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৯১৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ঈদগাহ হচ্ছে পবিত্র স্থান। এখানে বছরে দুই ঈদে সম্মিলিত হন মুসলমানরা। গরীব-ধনী এক কাতারে দাড়িয়ে আদায় করেন ঈদের সালাত। এদিন এ স্থানটি পরিণত হয় মুসলমানদের মিলনমেলায়।
মুসলমানরা এ স্থানকে সবসময় পবিত্র রাখেন। বিশেষ করে বড় বড় ঈদগাহ গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পবিত্রতা রক্ষায় থাকে বাড়তি নজরদারি।
কিন্তু, এরকম পবিত্র স্থানকে যখনই যারা অন্যকাজে বা বিনোদনের স্থারে পরিণত করতে যায় তখনই প্রতিবাদী হয়ে উঠেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
তেমনি সম্প্রতি সিলেট শাহী ঈদগাহর পবিত্রতা নষ্ট করতে কিছু লোক এ পবিত্র স্থানকে পার্কে পরিণত করেছে। প্রতিদিন বিকেল হলেই বিছু উঠতি বয়সী যুবক যুবতী তাদের নিরিবিলি আড্ডার স্থান হিসেবে ঈদগাহর ঐতিহ্য বিনষ্ট করছে।
পবিত্র এ স্থনকে পার্কে পরিণত করায় সিলেটের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও সচেতন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে।
পবিত্র এ স্থানের ঐতিহ্য রক্ষার আন্দোলনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও সচেতন মহলকে শরীক হওয়ার আহবান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহবান জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সিলেটের আলেম ঘরণার মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও গবেষক ‘ইকবাল হাসান জাহিদ‘।
আমাদের প্রতিদিন‘র পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-
‘সিলেটের শাহী ঈদগাহের পবিত্রতা রক্ষার আন্দোলনে আপনিও শরীক হোন…
সিলেট শহরের ভেতরের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটা হচ্ছে শাহী ঈদগাহ! এই ঈদগাহে সিলেটের অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, আলেম ওলামাসহ সকল শ্রেণির লোক ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন।
এটা সিলেটবাসীর ঐক্য ও ঐতিহ্যের স্মারক।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ইদানীং একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পনা করে এই ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহের সুনাম ও ঐতিহ্য বিনষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। একটি মহল চায় না সিলেটের এই ঈদগাহের পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ থাকুক। বজায় থাকুক ঈদগাহের সুনাম ও ঐতিহ্য।
এরই লক্ষ্যে এ ঈদগাহে তারা নানান ধরণের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা জুড়ে দিয়ে ঈদগাহের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্রে ইতিমধ্যে লিপ্ত হয়েছে৷ এই নিয়ে এলাকার সচেতন যুব সমাজ একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়েছিলো “ঈদগাহের পবিত্রতা রক্ষার্থে মহিলা প্রবেশ নিষেধ” এইটাইপের। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রকারী কুচক্রী মহলটি তাদের ধৃষ্টতা দেখিয়ে সাইনবোর্ডটি নামিয়ে ফেলেছে।
এখন প্রায় প্রতিদিন শত শত যুবক-যুবতি, প্রেমিক-প্রেমিকা, গলা-গলি, কুলা-কুলি করে আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছে এই পবিত্র জাগায়। ফলে ঈদগাহের পবিত্র নষ্টের সাথে সাথে বিনষ্ট হচ্ছে এই স্থানের ঐতিহ্য।
এরই লক্ষ্যে সিলেটের কিছু ওলামা মাশায়েখ কথা বলেছিলেন। তাদের কথাকেও তারা পাত্তা দেয়নি। বরং তাদের ধৃষ্টতা দিনের দিন বেড়েই চলেছে।
সেদিন আমি নিজে গিয়েও ঈদগাহের যে অবস্থা দেখলাম তা লিখে প্রকাশ করার মতো নয়।
শেষমেশ গত কয়মাস আগে, সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে মোয়াজ্জিন কল্যান সমিতির সম্মেলনে শায়খ মাওলানা রশীদুর রহমান ফারুক বরুণার হুজুরের সামনে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সিলেট ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব ভাই জোরালো বক্তব্য রাখেন।
এই বক্তব্যের পরেই বরুণার শায়খের সামনে জনাব আরিফুল হক চৌধুরী ঘোষণা দেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে শাহী ঈদগাহে ৮ ফুট উঁচু করে দেয়াল দেয়া হবে এবং এখানে অবশ্যই জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। যেই ঘোষণার স্বাক্ষী আমি নিজেও।
কিন্তু আমরা অবাক হলাম, আজ কয়েক মাস চলে গেলো। এখনও শাহী ঈদগাহের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা বন্ধের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখতে পেলাম না।
এই পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ার পেছনেও কী সেই কুচক্রী মহলে কালো হাত? আমরা সেটা জানতে চাই।
সিলেট শহরের ভেতরে বহু বছর ধরে দেখে আসছি, কোথাও অপেন কনসার্টের মতো অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে গ্রাস করতে পারেনি৷ এটা ছিলো সিলেটের ঐতিহ্য। কিন্তু আজকাল যা ঘটছে, বিশেষ করে গত এই ১০ বছরে যা দেখছি তা বলাই বাহুল্য।
যাইহোক, আমরা এত কিছু চাই না। বৃহত্তর সিলেটের ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানকে অন্তত আমরা কলঙ্কমুক্ত রাখতে চাই। এখানে যুবক যুবতির বদমায়েশির আস্তানা দেখতে চাই না। এখানে সিনামার শুটিং দেখতে চাই না।
সিলেটের সকল দল-মত ও শ্রেণির মানুষের উচিত এই ঐতিহাসিক ঈদগাহের পবিত্রতা রক্ষার আন্দোলনে শরীক হওয়া। আসুন, এর জন্য আমরা সিটি মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন জানাই। কাজ হলে আলহামদুলিল্লাহ, না হলে মাঠে আন্দোলন করব। ঈদগাহের পবিত্রতা রক্ষার্থে প্রকৃত মুসলমানদেরকেই কথা বলতে হবে।
(এই পোস্ট সকলে শেয়ার ও কপি করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করুন।’