শেষ হচ্ছে ডাকসুর মেয়াদ, হয়নি নুরদের অভিষেক!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৮:১০,অপরাহ্ন ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৭৫০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: প্রায় তিন দশক অচল থাকার পর সচল হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু’র নতুন কমিটি ইতোমধ্যে পার করেছে ১১ মাস। তাদের মেয়াদ আর মাত্র চল্লিশ দিন বাকি আছে। কিন্তু এখনো অভিষেক অনুষ্ঠানই করতে পারেনি দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংসদ।
গত বছরের ১১ মার্চ বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনের পর ডাকসুর ভিপির (সহ-সভাপতি) দায়িত্বে আসেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে আসা ছাত্রনেতা নুরুল হক নুর। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) হন গোলাম রাব্বানী (ওই সময়কার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে বহিষ্কৃত)।
নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল থেকে ২৩ জন আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি পদে নুরুল হক নুর এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে আখতার হোসেন নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের ১১ দিন পর ২৩ মার্চ নির্বাচিতদের প্রথম কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত হয় বর্ণাঢ্য এক আয়োজনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদে নির্বাচিতদের আনুষ্ঠানিক অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন।
সভা শেষে তখন উপাচার্য বলেছিলেন, এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ভিপি, জিএস এবং এজিএসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন কমিটি করে এ আয়োজনের উদ্যোগ নেবেন।
তবে ডাকসুর দায়িত্ব নেয়ার পর ১১ মাস পার করলেও তারা প্রত্যাশিত অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে পারেননি। এর জন্য ভিপি নুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আর জিএস রাব্বানীর নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন। এছাড়া নেতিবাচক রাজনৈতিক বাস্তবতাও কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি।
জানা যায়, আনুষ্ঠানিক অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্নের জন্য জিএস রাব্বানীর নামে ৩০ লাখ টাকাও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপরও অনুষ্ঠানটির আয়োজন সম্পন্ন করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিপি, জিএস ও এজিএস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হল ছাত্র সংসদের এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অভিষেক অনুষ্ঠান হলে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির পাশে দুর্নীতির দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত ডাকসুর জিএসকে বসাতে হতো। আর এটি হতো সবার জন্য দৃষ্টিকটু। এ জন্য ওপরের নির্দেশ অনুযায়ী এ নিয়ে আর সামনে এগোনো হয়নি।’
অনুষ্ঠানটি না হওয়ার পেছনে ছাত্রলীগের সদিচ্ছার অভাব এবং হিংসাত্মক মনোভাবকে দুষছেন ভিপি নুর। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি আয়োজনের দায়িত্ব ছিল মূলত জিএসের ওপর। তার নামেই টাকাটা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
‘আমি একাধিকবার তাগাদা দিয়েছিলাম অভিষেক অনুষ্ঠান করার জন্য। তবে এ নিয়ে প্রশাসন বা ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি কারো কোনো সদিচ্ছা বা তেমন কোনো সাড়া পাইনি।’
ছাত্রলীগের হিংসাত্মক মনোভাবকে দায়ী করে ভিপি নুর বলেন, ‘তারা আসলে চায় না ভিপি হিসেবে আমি ডাকসুর কোনো প্রোগ্রামে থাকি। অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন করলে সেখানে ভিপি থাকবে। ভিপি বক্তব্য দিলে ভিপির মেসেজ ছাত্রদের কাছে পৌঁছে যাবে, এই মনোভাব থেকেই হয়তো তারা অভিষেক অনুষ্ঠানটি করেনি।’
অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ভিপির ওপরও ছিল স্মরণ করিয়ে দিলে নুর বলেন, ‘তা ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা তো দেখতে হবে। ভিপিকে তারা কোনো মূল্যায়নই করে না, কাজ করার সুযোগও দেয় না। তাহলে বুঝুন।’
এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন বাস্তবতায় অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন হয়ে ওঠেনি। এটি নির্বাহ করার মূল দায়িত্ব ছিল ভিপি এবং জিএসের ওপর। তারপরও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতিবাচক বাস্তবতা, ভিপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, জিএসের কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেনি।’
ডাকসুর অভিষেক অনুষ্ঠান না হলেও নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বড় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করার চেষ্টা চলছে বলে জানান ডাকসুর এজিএস।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। তার ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকার কারণে সেসময় আর অনুষ্ঠানটি আয়োজনের বিষয়ে এগোনো হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি করে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করবো। তিনি তখন অসুস্থ থাকায় সময়টি আমরা পাইনি। পরে আমরা আচার্য মহোদয়ের কাছেও সময় চেয়েছিলাম। সেসময়ও একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল।’
‘যেহেতু সময়টি আমরা যে কোনোভাবে মিস করেছি, তখন আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য এত টাকা খরচ না করে নবীন ভাইবোনদের সঙ্গে নিয়ে একটি প্রোগ্রাম করবো।’
সব মিলিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি ড. মো. আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আয়োজন হয়নি, সেটা না। তারা (ডাকসু নেতারা) হয়তো খুব স্থিরভাবে এটি ঠিক করতে পারেনি।’
এটিকে ব্যর্থতা বলা যাবে কি-না জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘ওভাবে বলো না। এভাবে ঋণাত্মক অর্থে বলতে হয় না। বিভিন্ন কাজকর্ম বা ঘটনাপ্রবাহ ছিল। সব মিলিয়ে হয়তো ছেলেগুলো সমন্বয় করতে পারেনি। (সূত্র. ঢা.টা)