ইজতেমা ময়দানে আল্লাহু, আল্লাহু জিকিরে লাখো মুসল্লি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৫:৪৪,অপরাহ্ন ০৮ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৯৯৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মুখে আল্লাহু, আল্লাহু জিকির ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সমবেত হচ্ছেন লাখো মুসল্লি।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুই পর্বের মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) দুপুরের মধ্যেই মুসল্লিদের পদচারণায় ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবার ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। আর ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে তা শেষ হবে ১৯ জানুয়ারি।
ইতিমধ্যে পুরো ময়দান প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এবার ইজতেমা ময়দানের পরিধি কামারপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নাশকতার কোনো আশঙ্কা না থাকলেও প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নেওয়া হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। ইজতেমা ময়দানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে গাজীপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন।
এবার ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করবেন সারা দেশ থেকে আগত সাড়ে আট হাজার পুলিশ সদস্য। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এবারের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত হবে রবিববার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজতেমা ময়দানের বিশাল সামিয়ানা টাঙ্গানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে জোরেশোরে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। এরই মধ্যে মাঠের শতভাগ প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। ১৬০ একর জমির ওপর প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল চটের প্যান্ডেলের সামিয়ানার নিচে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ময়দানে প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছেন। এছাড়া রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। বিদেশি নিবাস, বয়ান মঞ্চ, তাশকিল কামরা এরই মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেই দিক খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করতে আমরা আসছি। বিদেশি মেহমানদের কামরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি।’
জাফর নামে একজন মুসল্লি জানান, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য ২০ বছর যাবত ইজতেমা মাঠে কাজ করছেন তিনি। গাজীপুরের কালিগঞ্জ থেকে আসা ৫৫ বছরের হাসান আলী বলেন, ‘এই দুনয়িা হচ্ছে ধোঁকার ঘর। আমরা জীবনে অনেক মানুষকে ধোঁকা দিয়েছি। সেই গোনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য ইজতমো মাঠে এসেছি।’
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, তাদের ব্যবস্থাপনায় আটটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৫টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪টি এবং র্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে ব্লিচিং পাউডার ও মশক নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫০টি বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন ও ধুলোবালি যাতে না ওঠে সেজন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা থাকছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি গ্যালন পানির ব্যবস্থা থাকছে। বাড়তি টয়লেট নির্মাণ ও পাকা টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে মুসল্লিদের কোনো সমস্যা হবে না।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তায় এখানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকছে পুরো ময়দানজুড়ে। খিত্তায় খিত্তায় নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় এবার ইজতেমায় সাড়ে আট হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে। ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন জানান, ময়দানের প্রস্তুতিকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুক্রবারের আগেই কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।