বিদায়ী বছরে সড়কে প্রাণ ঝরেছে ৪৬২৮ জনের
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৭:৩৫,অপরাহ্ন ০১ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৪৬১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বিদায়ী ২০১৯ সালে সড়ক দূর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছে গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ)। িএক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, গেলো বছরে চার হাজার ২১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ নারী ও ৭৫৪ শিশুসহ অন্তত চার হাজার ৬২৮ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮৬১২। আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬১৩ ও ৩৯৯।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মহাসড়ক, জাতীয় মহাসড়ক, আন্ত:জেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কসহ সারাদেশে এসব প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা ঘটে।
বুধবার (০১ জানুয়ারি) ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন এসসিআরএফ’র এক বিবৃতিতে ‘সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯’-এ এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং ৯টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গত বছর (২০১৯ সাল) সড়ক দুর্ঘটনা ও আহতের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের (২০১৮ সাল) তুলনায় কম হলেও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালে ৪৩১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৫৮০ জন নিহত ও ১০৮২৮ জন আহত হয়েছিল। আর গত বছর দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২১৯টি, এতে নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৬২৮ ও ৮৬১২।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৩৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৭১ শিশুসহ ৪১১ জন নিহত এবং ৫৮ নারী ও ৪০ শিশুসহ ৭২৫ জন আহত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে ৪০১টি দুর্ঘটনায় ৪১৫ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৮ ও ৬২। এছাড়া ওই মাসে ৮৮ নারী ও ৮৬ শিশুসহ আরও ৮৮৪ জন আহত হয়েছে।
মার্চে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৮৪টি। এতে ৪৬ নারী ও ৮২ শিশুসহ ৩৮৬ জন নিহত এবং ৬৭ নারী ও ৭৬ শিশুসহ ৮২০ জন আহত হয়েছে। এপ্রিলে ৩২৭ দুর্ঘটনায় ৩৪০ জন নিহত ও ৬১০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩৮ ও ৫৩ শিশু রয়েছে। আর আহতদের তালিকায় নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৬ ও ২৮। মে মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯৭টি, যাতে ৪৭ নারী ও ৪৪ শিশুসহ ৩৩৮ জনের প্রাণহানি এবং ২৭ নারী ও ১২ শিশুসহ ৫০৪ জন আহত হয়েছে।
জুনে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৬৭, ৪৩৯ ও ৮১৮। নিহতদের মধ্যে ৪৯ নারী ও ৬৯ শিশু এবং আহতদের মধ্যে ৫৪ নারী ও ২৫ শিশু রয়েছে। জুলাইয়ে ৩১১টি দুর্ঘটনায় ৪৬ নারী ও ৪০ শিশুসহ ৩৪৮ জন নিহত এবং ২১ নারী ও ২২ শিশুসহ ৫১৩ জন আহত হয়েছে। আগস্টে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা যথাক্রমে ৩৩৭ ও ৩৯৮। এতে ৪৭ নারী ও ৫৭ শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছে ৫৮ নারী ও ৩৮ শিশুসহ আরও ৮২৩ জন।
সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৫৩টি, এতে ৩৮ নারী ও ৬৪ শিশুসহ ৩৬৭ জন নিহত এবং ৫৭ নারী ও ১২ শিশুসহ ৮৪২ জন আহত হয়েছে। অক্টোবরে ৩৫৬টি দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫ ও ৭৮। এছাড়া এই মাসে ৩৯ নারী ও চার শিশুসহ আহত হয়েছে আরও অন্তত ৬৬৭ জন। নভেম্বরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি, এতে ৫৩ নারী ও ৬২ শিশুসহ ৩৪২ জন নিহত এবং ৬১ নারী ও ২৭ শিশুসহ ৬৮১ জন আহত হয়েছে।
বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮৯, ৪৪৬ ও ৬৮১। নিহতদের মধ্যে ৫৫ নারী ও ৭২ শিশু রয়েছে। আর আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৩৭ ও ২৯।
শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) সভাপতি আশীষ কুমার দে বলেন, তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১২টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে চিহ্নিত কারণ সেগুলো হলো- ১. গাড়ি চালানোর সময় চালকদের বেপরোয়া মনোভাব; ২. চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইলে ফোনালাপ; ৩. ট্রাফিক আইন অমান্য করে ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং; ৪. বিরতি ছাড়াই দূরপাল্লার সড়কে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালানো; ৫. অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ; ৬. মহাসড়কে মোটরবাইকসহ ক্ষুদ্র যানবাহনের অবাধ চলাচল; ৭. ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব; ৮. দূরপাল্লার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও বেহাল দশা; ৯. নিয়োগপত্র না পাওয়ায় পরিবহন কর্মীদের মাঝে হতাশা; ১০. চালক ও সহকারীর কাছে দিন চুক্তিতে গাড়ি ভাড়া দেয়া; ১১. বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজির কারণে শ্রমিক অসন্তোষ; ১২. পথচারীদের অসর্কতা ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গ।