জামায়াত, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম নিষিদ্ধ হয় আজ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩৫:৪০,অপরাহ্ন ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ২৭৪ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ১১ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির একটি অহংকার, গৌরব ও স্মরণীয় দিন। আর যশোরবাসীর জন্য এটি অনন্য দিন। কারণ পাক হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত এদিন স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা হয় যশোরের মাটিতে। এদিন ভাষণ দিয়েছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ।
ভাষণ শেষে এক বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন তাজউদ্দিন আহমেদ।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহাসিক এ বিজয় সমাবেশ। মুক্ত বাংলার প্রথম এ জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’ সেদিন তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এমআর আকতার মুকুল ও জহির রায়হান প্রমুখ।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে জনতাকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।’’
তাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, স্বাধীন এ দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম জানান, মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন- লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এসএইচ সানবার্গ, ওয়াশিংটন পোস্ট’র প্রতিনিধিসহ অনেক বিদেশি সাংবাদিক।
এর আগে ৬ ডিসেম্বর বিকেলের মধ্যেই যশোর শহর থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে চলে যায়। এদিন বিকেলে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। আর প্রথম জেলা হিসেবে যশোর হানাদার মুক্ত হয়।
যশোর সেনানিবাস থেকে পাক বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া-মহল্লায়ও চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে আনন্দে উল্লাস করেন গোটা জেলার মানুষ। এরপর ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে যশোরে আসেন।