হারিয়ে যাচ্ছে কোরআন শিক্ষার মক্তব
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৫:১৩,অপরাহ্ন ১৩ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ১৬৮০ বার পঠিত
বিশেষ রিপোর্ট:: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কোরআন শিক্ষার মক্তব। আগের মত এখন আর কঁচিকাঁচা শিশুদের কোরআন শিক্ষার জন্য মক্তবে যেতে দেখা যায় না। কালিমা আর আলিফ, বা, তা এর শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেনা জনপদ। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিল কোরআন শুদ্ধ করে জানে এমন একটি মেয়েই হবে ঘরনী। যাতে বাড়ীঘর কোরআনের শব্দে বরকতময় হয়ে উঠে। এখন সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে মুসলিম এই রাষ্ট্র থেকে।
মক্তব আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ পাঠশালা বা বিদ্যালয়। শিশুদের কোরআন শিক্ষার এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক মৌল জ্ঞানার্জনের উত্তম শিক্ষা কেন্দ্র হলো এ কোরআনি মক্তব। এখান থেকে শিশুরা কোরআনের তেলাওয়াত শেখার পাশাপাশি নামাজ-রোজার নিয়ম কানুন, জরুরি মাসআলা-মাসায়িল, দোয়া-কালাম ইত্যাদি শিখতে পারে। কিন্তু এমন পাঠশালা থেকে এখন আর অবধারিত রোজ সকালে কোরআনের আওয়াজ কঁচিকাঁচা শিশুদের কন্ঠ থেকে বের হয় না। শিশুদের অভিবাবকদের অবহেলার কারনে মসজিদের ইমাম সাহেবরা এখন মক্তবে কোরআন পড়ানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যার কারনে এলাকার শিশু কিশোররা কোরআন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দেখা যায় কোথাও কোথাও মক্তবগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও যা-ও চালু আছে, সেগুলোতেও আগের মতো জৌলুস নেই। শিশুদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। নামে মাত্র চলে এসব কোরআন শিক্ষার পাঠশালা। বেশিরভাগ শিশুরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্কুলে কোচিং অথবা কিন্ডার গার্টেনে ক্লাসের সময় হয়ে যায়। ইসলামী বুনিয়াদি শিক্ষার এ অবারিত ও ঐতিহ্যগত প্রতিষ্ঠান চিরতরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এর আগে দেশের প্রতিটি মুসলিম জাতিকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গন শিক্ষা চালু করেন। বর্তমানে দেশের প্রতিটি উপজেলার কিছু কিছু ইউনিয়নে এমন ফাউন্ডেশন রয়েছে। যদিও তিন স্তরে, অর্থাৎ প্রাক প্রাথমিক, বয়স্ক ও কুরআন শিক্ষা চালু করলেও কিছু কিছু শিশুরা এই ফাউন্ডেশনে পড়তে আসে। সেই অনুসারে সরকারীভাবে চলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গন শিক্ষা।
অনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন এ শিশুদের শিক্ষাদানের কারনে মক্তব হারিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারন বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু এমন ফাউন্ডেশন যদি জেলার সবকটি এলাকায় থাকতো তাহলে প্রতিটি শিশুর মধ্যেই ছড়িয়ে দেয়া যেতো ধর্মীয় জ্ঞান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিন সাহেবান বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদের বারান্দায় বসে অপেক্ষায় থাকতে হয় কখন ছাত্র আসবে। কিন্তু কোনদিন ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও কেউই আসেনা। আবার কোনদিন হলে একজন বা দুইজন আসে, তাও আবার ৭ টা সাড়ে ৭ টার পর।
আরেকজন বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে এমনকি প্রতি জুমার ওয়াজে বলা হলেও কাজে আসেনা। এজন্য তিনি বলেন, স্থানীয় সচেতন মহল ও যুবসমাজ এগিয়ে আসলে হয়তো কিছুটা উন্নতি আসতে পারে।