‘এরশাদ নয়, খালেদা-হাসিনাই স্বৈরাচার’
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৪:২৬,অপরাহ্ন ১১ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৮৯৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ ও স্বৈরাচার এরশাদ নন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুই জনই স্বৈরাচার বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা।
রবিবার (১০ নভেম্বর) বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেনকে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর।’ মহানগর উত্তর শাখার উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত দলীয় আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙ্গা বলেন, নূর হোসেনকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নাচানাচি করে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখবেন নূর হোসেন দিবস। সেই নূর হোসেন চত্বর এরশাদ করে দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদ নন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুই জনই স্বৈরাচার। আমরা কোনোভাবেই স্বৈরাচার নই।’
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গণতন্ত্রটা হলো এমন, যারা অতি ফেন্সিডিলখোর, ইয়াবাখোর, যারা ক্যাসিনোর ব্যবসা করে, তারাই হলো গণতন্ত্রের সোনার সন্তান। এরশাদ গণতন্ত্রের ধারাক-বাহক ছিলেন দাবি করে রাঙ্গা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন এরশাদ। ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা
যদি বিশ্বজিৎ, আবরারকে হত্যা করা না হতো তাহলে আমরা বলতাম গণতন্ত্র আছে মন্তব্য করে রাঙ্গা বলেন, একজন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ করে দেওয়া হলো। গণতন্ত্রের সোনার ছেলেরা, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।
রাঙ্গা বলেন, ‘এখন প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তনুকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির আমলে গুলি করে ১৮ জন কৃষককে হত্যা করা হলো। এটা গণতন্ত্র?’
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দেখেছি অপারেশন ক্লিন হার্ট। হার্ট পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রত্যেক দিন ৩ থেকে ৫ জনকে মারা হয়েছে। তখন আমি সংসদ সদস্য ছিলাম, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই অপারেশন ক্লিন হার্ট নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? এটা তো সংসদে পাস হয়নি। মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে? তখন স্পিকার হাত নেড়ে বললেন, এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোনও প্রশ্ন নয়। আপনি এমন প্রশ্ন করা বন্ধ করুন। কিন্তু খালেদা জিয়া হাত নেড়ে বললেন, ‘আমি প্রশ্নের জবাব দেবো’। তিনি বললেন, ‘এটা আমরা মন্ত্রিসভায় পাস করে নিয়েছি।’ যারা দুর্নীতি করবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন বলেও খালেদা জিয়া বলেছিলেন।’’
রাঙ্গার অভিযোগ, ‘‘এখন গ্রামে আওয়ামী লীগের একজন ছোট কর্মীও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যকে ধমক দেন, ‘এই বেটা বেশি কথা বললে তোকে জেলে নিয়ে যাবো।’ ছাত্রলীগের ওসি, এসআই। সব তারা নিয়ে যাচ্ছে। এটা কোনও গণতন্ত্র হলো? স্বৈরাচারের আরেক রূপ হলো এই ধরনের গণতন্ত্র।’
রাঙ্গা বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যুক্তিতর্কে আসুন, যেকোনও টেলিভিশনে আমরা ডিবেটে বসবো। আমাদের দলের লোকেরা থাকবেন। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছি, তাহলে দল করবো না। সংসদে থাকবো না। আমরা আজকে যাকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলি, সেই শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, ‘এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণে আমরা অসন্তুষ্ট নই।’ এটি আপনারা জানেন নাকি?’’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘‘১৯৯৬ সালে আমাদের সমর্থন ও ভোট নিয়ে ক্ষমতা এসেছিলেন। ৯৬ সালে আমরা ৩৫টি আসন পেয়েছিলাম। ১১৬টি আসন পেয়েছিল বিএনপি। তখন বিএনপি জেলে গিয়ে এরশাদকে বলেছিল, ‘স্যার আমাদের সমর্থন দিন, আপনি সরকার চালান।’ তখন এরশাদ বলেছিলেন, ‘না, তোমরা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছ। ১২ দিন মাটিতে শুয়ে রেখেছো। তোমাদের সমর্থন দেবো না।’ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে এরশাদ বলেছিলেন, ‘তোমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দাও।’ এরপরই ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসেছিল।’’ এরশাদের অনুগ্রহেই ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল বলেও রাঙ্গা দাবি করেন।
নূর হোসেনকে হত্যার ঘটনায় এরশাদ সরকার দায়ী ছিল না দাবি করে জাপা মহাসচিবের তির্যক মন্তব্য, ‘নেশাখোর নূর হোসেনকে এমন গুলি করলো… এরশাদের সময় এমন গুলিও ছিল, যা বুকের সামনে দিয়ে ঢুকে আবার পেছন দিয়ে লাগে। এটা ঘুরে আসে!… সামনে দিয়ে গুলি করছে, সেটা ঘুরে এসে নূর হোসেনের পেছন দিকে লেগেছে! যদি বুকের মধ্যে লাগতো তাহলে বুঝতাম পুলিশ করেছে।
একজন নূর হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এত হইচই হলেও বর্তমানে এমন কোনও দিন নাই বাংলাদেশে মানুষ মরছে না বলেও মন্তব্য করেন রাঙ্গা। তিনি অভিযোগ করেন, দেশে এখন হাজার হাজার খুন হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একজন মহিলাও আরেক মহিলাকে কোপাচ্ছে!
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আরেক শহীদ ডা. মিলনকে বিএনপি পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করেছে বলেও দাবি করেন রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘‘তারা লাশ চেয়েছিল। তখন এরশাদ বলেছিলেন আমরা কী ঠেকা পড়েছে ক্ষমতায় থাকার! তখন তিনি বলেছিলেন, ঠিক আছে তোমরা ক্ষমতা নাও। কিন্তু, আমাকে জেলে নিতে পারবে না, এটা তোমরা লিখে দাও। কিন্তু বিচারপতি নামের ‘কলঙ্ক’ সাহাব উদ্দিন সেটা মানেননি।’’