চলে গেলেন সাদেক হোসেন খোকা, দেশে ফেরার আকুতি থেকেই গেলো!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫৭:৫৬,অপরাহ্ন ০৪ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৬০৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: মৃত্যুর আগে বারবার দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধা এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য মতে, গুরুতর অসুস্থ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় খোকা বারবার দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছিলেন।
তবে আর তার জীবিত ফেরার সুযোগ রইল না। সোমবার (৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ক্যানসার চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দুর্নীতি মামলায় খোকার সাজা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি ছিল। এরপরও বারবার দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন খোকা। কিন্তু শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে দেশে ফেরেননি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে তিনি একাধিকবার দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছিলেন। সবশেষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সঙ্গে ফোনালাপে দেশে আসার আকুতির কথা জানান খোকা।
রবিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খোকার জন্য দোয়া মাহফিলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যখন আমরা স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করছি, তখন সাদেক হোসেন খোকাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে দেশের বাইরে রাখা হয়েছে। তিনি ক্যান্সার রোগে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন।’
‘আমি কয়েকবার তার সঙ্গে নিউইয়র্কে দেখা করেছি। প্রতিবারই তিনি আমাকে বলেছেন- যদি অসুস্থ না হতাম, তা হলে আমি দেশে গিয়ে জেলে যেতাম, মানুষের সঙ্গে থাকতাম।’
ফখলুল বলেছিলেন, ‘সাদেক হোসেন খোকা আমাদের ও তার বন্ধুদের বলেছেন যে, দেশের মাটিতেই যেন তার কবর হয়।’
এদিকে হাসান মাহমুদ টুকু জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে সাদেক হোসেন খোকা তাকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের মাটিতে বিদায় হবে কিনা আল্লাহ জানেন। আমার জন্য দোয়া করো।’
খোকার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও খোকার সুস্থতা কামনায় একটি আবেগঘন খোলা চিঠি লিখেছিলেন। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সেই চিঠিতে মির্জা আব্বাস লিখেন, ‘প্রিয় খোকা, এই মাত্র আমি খবর পেলাম যে, তোমার শরীর খুব খারাপ। তুমি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। জানার পর থেকে আমার মানসিক অবস্থা যে কতটা খারাপ, এই কথাটুকু কারও সঙ্গে শেয়ার করব, সেই মানুষটা পর্যন্ত আমার নেই। তুমি-আমি একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, অনেক স্মৃতি আমার চোখের সামনে এই মুহূর্তে ভাসছে।…’
মির্জা আব্বাস একসময় ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পরে তার জায়গায় আসেন খোকা। এরপর আবারও মির্জা আব্বাসকে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়। ঢাকার এক সময়ের মেয়র ছিলেন মির্জা আব্বাস। পরে খোকাও মেয়র হন। মির্জা আব্বাস বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে একাধিকবার মন্ত্রী হন।
খোকাও ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খোকা নানা মামলা ও দণ্ড মাথায় নিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ মে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য সপরিবারে নিউইয়র্ক চলে যান। তারপর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে বাস করছিলেন তিনি।