হেলালের মোবাইল রিফাত নিজেই ফিরিয়ে দেয়!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৯:৩১,অপরাহ্ন ২২ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৯৩১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: দেশব্যাপী আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড একেকদিন একেক দিকে ঘুরছে। আসলে কি কারণে রিফাত খুন হন তা এখনও সঠিকভাবে উদঘাটন হয়নি। তবে বরগুনা পুলিশ বলছে হেলাল নামে একজনের মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে স্বামী রিফাত শরিফরে হাতে মারধরের প্রতিশোধে এ হত্যাকান্ড। কিন্তু সেই মোবাইলের মালিক হেলালের মায়ের অনুরোধে একইদিন বিকেলে মোবাইলটি ফিরিয়ে দেন রিফাত। তাহলে কোন মোবাইল মিন্নি নয়ন বন্ডের হাতে দেয়ায় রিফাত তাকে মারধর করে। এনিয়ে এখন সর্বমহলে চলছে আলোচনা। আসলে কি কারণে এ হত্যাকান্ড বা নেপথ্যে কি তা ঘুরপাক করছে সচেতন মহলে।
জানা গেছে, আলোচিত এ হত্যাকান্ডের দুদিন আগে হেলাল নামের এক বন্ধুর মোবাইল ফোন নিয়েছিলেন রিফাত। হেলালের বোন পারুল বেগম ও স্ত্রী মনিকা বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে কী কারণে বা কেন হেলালের মোবাইল ফোন রিফাত নিয়েছিলেন, তা জানাতে পারেননি তারা।
পারুল বেগম বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে গত ২৪ জুন আমি হেলালকে সঙ্গে নিয়ে আমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার জন্য বাজারে যাই। বাজারের মিষ্টিপট্টি এলাকায় আমরা পৌঁছালে রিফাত শরীফের সঙ্গে দেখা হয়।
এ সময় রিফাত শরীফ হেলালকে ডেকে নিয়ে তার মোবাইল ফোনটি দিতে বলেন। হেলাল নিজের মোবাইল ফোনটি রিফাতের হাতে দিলে মোবাইলটি নিয়ে চলে যান রিফাত। এ সময় রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নিও ছিলেন।’
পারুল বেগম আরো বলেন, ‘ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে বাসায় এসে মাকে বিষয়টি জানাই। তখন মা বেশ কয়েকবার রিফাত শরীফকে কল দিয়ে মোবাইলটি দিয়ে যেতে বলেন। এরপর বিকাল ৫টার দিকে রিফাত আমার ভাই হেলালকে ডেকে নিয়ে মোবাইলটি দেন।’
পারুল বেগম আরো বলেন, মোবাইলটি রিফাত শরীফ কেন নিয়েছিলেন, তা আমি জানি না। ওই মোবাইলে গোপন বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ছিল কি না, তাও আমি জানি না।
হেলালের স্ত্রী মনিকা বেগম বলেন, হেলালের মোবাইলটি রিফাত শরীফ নিয়েছিলেন বরগুনা পৌর মার্কেটের নিচে থাকা অবস্থায়। সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টার দিকে। মোবাইলটি নিলেও আমার শাশুড়ির অনুরোধে বিকাল ৪টা কিংবা ৫টার দিকে ফিরিয়ে দেন রিফাত।
মনিকা বেগম বলেন, মোবাইলটি রিফাত শরীফ কেন নিয়েছিলেন, তা আমি জানি না। মোবাইলে গোপনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য ছিল কি না, তাও আমার জানা নেই।
এরই মধ্যে রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন হেলাল। এ কারণে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
এদিকে হেলালের কাছ থেকে মোবাইল নেওয়ার দুদিন পরই রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ২৬ জুন বুধবার রিফাত শরীফ হত্যার শিকার হন। ঘটনার দুদিন আগে সোমবার রিফাত শরীফ হেলাল নামে তার এক বন্ধুর মোবাইল ছিনিয়ে নেন। হেলাল রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
ওই মোবাইল উদ্ধারের জন্য নয়ন বন্ড মিন্নির দারস্থ হন। পরে রিফাত শরীফের কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করেন মিন্নি। কিন্তু ওই ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মারধরের শিকার হন মিন্নি।
পুলিশের ওই সদস্য আরো বলেন, নয়নের কথায় রিফাত শরীফের কাছ থেকে হেলালের ফোন উদ্ধার করেন মিন্নি। কিন্তু ওই ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে রিফাত শরীফের মারধরের শিকার হন। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মঙ্গলবার নয়নের সঙ্গে দেখা করে মিন্নি সেই মোবাইল নয়নের হাতে তুলে দেন।
এ সময় মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফের হাতে যে মারধরের শিকার হয়েছেন, তার প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে মারধর করতে বলে। তবে মারধরের সময় নয়ন যাতে উপস্থিত না থাকেন, সেটিও বলে দেন মিন্নি। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় বরগুনা কলেজ মাঠে মিটিং করে রিফাত শরীফকে মারধরের প্রস্তুতি নেয় বন্ড বাহিনী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ‘হেলালের কাছ থেকে মোবাইল নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। তবে রিফাত হত্যায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আমি জানি।’
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইনসে নিয়ে যায় পুলিশ।
এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং পুলিশের কৌশলী ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বুধবার বিকাল ৩টার দিকে বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
পরদিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছিলেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ইতোমধ্যে মিন্নি স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
রিমান্ড শেষে শুক্রবার মিন্নিকে আদালতে তোলা হয়। ওই সময় স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মিন্নি। পরে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।
গতকাল রোববার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। কিন্তু বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৪ জন অভিযুক্ত রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এ মামলার দুজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছেন। এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। (সো. নি)