সিলেট প্রেসক্লাব ডে-আনন্দ-স্বস্থির অনুভূতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৩:০৮,অপরাহ্ন ১৬ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪০৭ বার পঠিত
:: ইকবাল মাহমুদ ::
২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের সময় যে ক’টি বিষয়কে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম তার মধ্যে অন্যতম ছিলো সিলেট প্রেসক্লাবের সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা। বহু চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম কাজটা সহজ নয়। কেননা, প্রেসক্লাবের ইতিহাস নিয়ে পূর্বসূরিদের মধ্যে ঐকমত্য নেই। বিশেষ করে ক্লাব এর প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে দুই ধরণের মতামত প্রবলভাবে বিদ্যমান। কার্যবিবরণী রেজিস্ট্রার ঘেঁটে জানতে পারলাম ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্য ইতোপূর্বে কয়েক দফা উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
বস্তুতপক্ষে ১৯৬৫ সালের ১৩ জুলাই সিলেট জেলা প্রেসক্লাব নামে সর্বপ্রথম প্রেসক্লাবের গোড়াপত্তন করা হয়। কয়েক বছর পর এর কার্যক্রমে স্থবিরতা আসে। ১৯৭৭ সালে প্রেসক্লাব পূণর্গঠণের মাধ্যমে সিলেট প্রেসক্লাবে নবযুগের সূচনা করা হয়। নিজস্ব ঠিকানা, ভবন সবকিছু হতে থাকে, গতিশীলতা আসে ক্লাবের কার্যক্রমে। সেই থেকেই প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে মতদ্বৈততার সূচনা। সাতাত্তরের নায়ক যারা ছিলেন, তারা প্রকারান্তরে পয়ষট্টিকে অস্বীকার করতে শুরু করেন।
ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে এখানেই হোটচ খেতে হয়েছে বারবার। আমরা ভাবলাম, এ দুই মতের সম্মীলণ করতে না পারলে নির্মোহ ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা একাডেমিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়াকেই অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করলাম। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আমরা সিলেট প্রেসক্লাব ফেলোশিপ চালু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফেলোশিপ এর গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করলাম ‘সিলেটের সাংবাদিকতা ও সিলেট প্রেসক্লাব ‘। ক্লাবের সহযোগী সদস্য জনাব, সেলিম আউয়াল এক বছর ধরে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একাডেমিক পদ্ধতি অনুসরণ করে গবেষণা করলেন। সময় সময় তার গবেষণা নিবন্ধগুলো ছাপা হতে থাকলো স্থানীয় পত্রিকার পাতায়। তিনি ৬৫ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় যারা প্রেসক্লাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের ইন্টারভিউ করলেন। তাদের স্বহস্তে স্বাক্ষর সম্বলিত বক্তব্য সংগ্রহ করলেন। আনন্দের খবর হলো একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রায় সকলেই প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে একমত্য পোষন করলেন। সাতাত্তর সালের প্রেসক্লাব পয়ষট্টির ধারাবাহিকতা বলেই মত দিলেন।
জনাব সেলিম আউয়াল এর ফেলোশিপ গবেষণাপত্র সম্প্রতি অনুমোদন করে কার্যনির্বাহী কমিটি। আর এর মাধ্যমে সিলেট প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিভ্রান্তিরও অবসান হলো।
এখন থেকে প্রতিবছর ১৩ জুলাই সিলেট প্রেসক্লাব ডে হিসেবে উদযাপনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি। সিলেট প্রেসক্লাবের ৫৪ বছর পূর্তি হচ্ছে এবার। এ শুভলগ্নে আমি প্রেসক্লাবের জীবিত এবং মৃত সকল সদস্যের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সিলেট প্রেসক্লাবকে আজকের অবয়ব, কাঠামো এবং মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে যারাই যুগে যুগে তাদের মেধা, শ্রম এবং অর্থ নিবেদন করেছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান কামনা করছি। সিলেট প্রেসক্লাবকে সাংবাদিকদের কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমাদের ঐক্য ও সংহতিই পারে ঐতিহ্যের ধারা সমুন্নত রেখে একটি সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ নিশ্চিত করতে।
৫৪ বছর পূর্তি ও সিলেট প্রেসক্লাব ডে ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমাদের উৎসাহিত করেছেন। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বাণী দিয়ে শুভাশিস জানিয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা।
এ আনন্দের উপলক্ষটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘জয়ন্তী’ নামে একটি স্যুভেনির প্রকাশ করা হলো।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, সিলেট প্রেসক্লাব