শশুরের বিরুদ্ধে মিন্নির পাল্টা সংবাদ সম্মেলন!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৮:৫৪,অপরাহ্ন ১৪ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ১২০৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার মূল অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা গেলেও ধিরে ধিরে বের হচ্ছে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। ঘটনারদিন রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বাভাবিক চলাচলের একটি ভিডিও ফুটেজ হত্যাকান্ডের মুড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এরই মাঝে শনিবার (১৩ জুলাই) রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের করা সংবাদ সম্মেলন ও রিফাতের স্ত্রী মিন্নির পাল্টা সংবাদ নানা জল্পনা কল্পনা সৃষ্টি করেছে।
রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলনে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানান। পরদিন রবিবার (১৪ জুলাই) পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নি তার শশুরকে অসুস্থ বলে দাবি করেন।
রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বলেন, আমার শ্বশুর অসুস্থ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যারা বরগুনায় ‘বন্ড ০০৭’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করিয়েছিলেন, তারা খুবই ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী। নেপথ্যের এই ক্ষমতাবানেরা বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকা ও এই হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য শ্বশুরকে চাপ দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।
সম্মেলনে মিন্নি বলেন, নয়ন বন্ড একজন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে অনেক মামলা ছিল। সে আমাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করত। আমার ছোট ভাই ও বাবাকে হত্যার হুমকি দিত। এজন্য তার বিরুদ্ধে কখনো মুখ খোলার সাহস পাইনি। আমার স্বামীকে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে নেতিবাচক, কুরুচিপূর্ণ নানা পোস্ট এবং এডিট করা ছবি আপলোড করে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করে।
তিনি বলেন, এর মূল উদ্দেশ্য এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা। কারণ যারা ০০৭ সন্ত্রাসী গ্রুপটি যারা সৃষ্টি করেছিলেন, তারা খুবই ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী। ঘটনার দিন আমার স্বামীকে কোপানোর সময় আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচাতে। এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় আমিই রিকশায় করে রিফাত শরীফকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। যখন চিকিৎসকেরা তাকে বরিশালে পাঠাতে বলেন, তা শুনে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে আমি জানতে পারি তাকে বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নদের বাড়িতে যাওয়ার প্রসঙ্গে মিন্নি বলেন, এটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আর নয়ন বন্ডের সঙ্গে আমার যে আগে বিয়ে হওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে, সেটাও মিথ্যা। কারণ, নয়ন বন্ড আমাকে জোর করে ধরে একটি বাড়িতে নিয়ে একটা কাগজে সই রেখেছিল। এরপর কী করেছে সেটা জানি না। পরে শুনি সেটা বিয়ের কাবিননামা।
মিন্নি অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের দুই মাস পর স্বামীকে হারালে একজন নারীর মানসিক অবস্থা কেমন থাকতে পারে! তার ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনবরত কুৎসা এবং বাজে ছবি পোস্ট দেওয়ার কথা শুনে আমি আরও বিপর্যস্ত। রিফাতকে হত্যার পর থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের বাড়িতে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাতে চাই, আমি একজন স্বামীহারা অসহায় নারী। এই সুযোগে আমার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’
এ দিকে রবিবার (১৪ জুলাই) সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, রিফাত হত্যায় তার স্ত্রী মিন্নি জড়িত। ‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে অংশ নিয়ে রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ। বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যার পেছনে মিন্নির হাত আছে বলে আমরা মনে করি। তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই হত্যার মূল রহস্য বের হয়ে আসব।