কানাইঘাটে পুলিশে চাকুরির নামে ঘুষ দাবী, আ’লীগ নেতা আটক!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৩:৫০,অপরাহ্ন ০৮ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৫৩ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পাওয়া এক তরুণের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করায় আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে সিলেটের কানাইঘাট থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক আলী আহমদের বাড়ী উপজেলার সাঁতবাক ইউনিয়নের জয়পুর (পূর্ন খলা) গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত মখবুল আলী। সে সাতঁবাক জুলাই গ্রামের ইমরান হুসেনের কাছে চাঁদা দাবি করেছিল। এ ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভোক্তভোগীর পরিবার সূত্র জানায়, ‘আলী আহমদ দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইমরান হুসেনকে গত ২৪ জুন স্থানীয় ভবানীগঞ্জ বাজারে পেয়ে বলেন পুলিশের কনস্টেবল পদে লোক নেওয়া হবে। এমপি ও সিলেটের এসপিসহ সকলের সাথে আমার সুসস্পর্ক রয়েছে। চাকুরী যদি পেতে চাও তাহলে আমাকে ৫ লক্ষ টাকা দিলে তোমাকে পুলিশে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেব। এই বলে প্রতারক আলী আহমদ ইমরান হুসেনকে চাকুরী দেওয়ার নামে তার পরিবারের পিছু নেয়। আলী আহমদ ২৮ জুন গ্রামের খলিল আহমদের বাড়ীতে দরিদ্র ইমরান আহমদের বাবা জমির উদ্দিন ও মা আনোয়ারা বেগমকে নিয়ে বৈঠক করে পুলিশের চাকুরী নিশ্চিত হবে বলে পুনরায় তাদেরকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করার জন্য বলেন। এতে দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইমরান হুসেনের বাবা-মা তাদের কাছে কোন টাকা নেই বলে জানান। তাদের সন্তান যদি পুলিশে চাকুরী পায় তাহলে ইমরানের নিকট আতœীয় আলী আহমদকে খুশি করবেন বলে জানান। তাছাড়া সিলেটে পুলিশ লাইনে রিক্রুট কনস্টেবল পদে প্রাথমিক যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ওইদিন বাছাই ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তির্ণ ইমরান হুসেনকে পুলিশ লাইন থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আলী আহমদ ও তার সহযোগী আব্দুস ছাত্তার বলেন তুমি আমাদের কথা মতো লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ, চাকুরী হয়ে যাবে তোমার আইডি কার্ড দাও। কিন্তু ইমরান হুসেন কৌশলে তাদের কাছ থেকে ছিটকে বের হয়ে বাড়ীতে ফিরে আসেন।’
‘লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষায় চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ হয়ার পর গত ৫ জুন আলী আহমদ ইমরানের বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে বলে পুলিশের চাকুরী আমরা করে দিয়েছি। শুধু তোমাদের জন্য ৫ লক্ষ টাকার পরিবর্তে আমি তোমাদের আতœীয়ের কারণে এখন ২ লক্ষ টাকা দাও। ইমরান হুসেন বলেন পুলিশে চাকুরী ফেতে হলে কোন ধরনের ঘুষ লাগেনা বলে তারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলী আহমদ ইমরানের বাবা-মাকে হুমকি দিয়ে বলে ২ লক্ষ টাকা তাদের না দিলে ছেলেকে কিডনাপ করবে এবং চাকুরী হবেনা। তার সহযোগী আব্দুস ছাত্তার মোবাইল ফোনে ইমারানের বাবা-মাকে এ ভাবে হুমকি প্রদান করেতে থাকে।’
গত শনিবার সিলেটে রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রাপ্ত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশ করা হয়। এতে অভিভাবক সমাবেশে সিলেটের নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন শত ভাগ নিরপেক্ষ এবং মেধার ভিত্তিতে মাত্র ১০৩ টাকার বিনিময়ে সিলেটে ৩৪৮ জনকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোন নিয়োগ প্রার্থী দালাল ও বাটপারদের চাকুরী দেওয়ার নাম করে কাহারোও কাছ থেকে অর্থ গ্রহনের কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে চাকুরীচ্যূত করা হবে।
এ সময় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরী পাওয়া অভিভাবক সমাবেশে উপস্থিত ইমরান হুসেনের মা আনোয়ারা বেগম প্রতারক আলী আহমদ ও আব্দুস ছাত্তার কর্তৃক চাঁদা দাবি ও তার ছেলেকে অপহরণসহ সমূহ বিষয়টি তুলে ধরেন। তাৎক্ষনিক পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন প্রতারক আলী আহমদ ও আব্দুস ছাত্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেলের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিলে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ রাতে কৌশলে আলী আহমদকে গ্রেফতার করেন।
প্রাথমিক পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আলী আহমদ পুলিশে চাকুরী দেওয়ার নামে ইমরান হুসেনের পরিবারের কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছে। আলী আহমদ আটক হয়ার পর থানায় উপস্থিত হয়ে সমূহ বিষয়টি অবহিত করে আলী আহমদ ও তার সহযোগী ছাত্তারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন পুলিশে নিয়োগ কৃত ইমরান আহমদের মা আনোয়ারা বেগম। থানার মামলা নং ৬ তারিখ ০৬/০৭/২০১৯ ইং।
কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ জানান, প্রতারণার মাধ্যমে ইমরান আহমদের নিকট থেকে কৌশলে অর্থ আত্মসাত করার অপরাধে আলী আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে, এছাড়া প্রতারক চক্রের অন্যান্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।