তনু হত্যা: জিজ্ঞাসাবাদেই কেটে গেলো তিন বছর!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৩৪:১৭,অপরাহ্ন ২০ জুন ২০১৯ | সংবাদটি ১৩৬৬ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বহুল আলোচিত তনু হত্যার তিন বছর আজ বৃহস্পতিবার । ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য, নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু।
তার হত্যার পর দীর্ঘ তিন বছর সময়েও হত্যাকারী শনাক্ত হয়নি, এমনকি তার পিতার দায়ের করা হত্যা মামলারও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। জিজ্ঞাসাবাদেই দীর্ঘ তিন বছর কেটে গেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থার।
তনু হত্যাকারীদের এখনও চিহ্নিত করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তনুর মা আনোয়ারা বেগমে জানান, প্রায় এক বছর ধরে সিআইডির সঙ্গে তাদের পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। অফিসে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
তনুর মা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এবিষয়ে কথা বলতে চান। তিনি এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও তনু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে না পারার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, মামলাটির তদন্তে সিআইডি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
এদিকে তনু হত্যার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে তনুর সহপাঠীরা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী তনু হত্যার বিচার দাবিতে সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে ‘শোক বিয়োগান্তে ৩ বছর’ লেখা ব্যানার নিয়ে শোক র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা তনু হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচার দাবি করেন।
তনু হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণমঞ্চ।
হত্যা মামলার তদন্ত কাজে কোনো স্থবিরতা নেই উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা এবং ম্যাচিংয়ের কাজ চলছে, এটি সময় সাপেক্ষ। মামলার প্রয়োজনে এখনও বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতরে একটি বাসায় পড়াতে গিয়ে দীর্ঘ সময় পরেও তনু বাসায় না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পারবারের সদস্যরা।
গভীর রাতে তাদের বাসার কিছু দূরে সেনানিবাসের ভিতর একটি জঙ্গলে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
এঘটনার পর দিন তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয় অজ্ঞাতনামাদের।
মামলাটি প্রথমে কুমিল্লা কোতোয়ালী থানা পুলিশ, পরে এটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করে। এরপর ২০১৬ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব¡ দেয়া হয় সিআইডির ওপর।ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শনাক্ত হয়নি হত্যাকারী। এমনকি মামলারও তেমন অগ্রগতি নাই বললেই চলে।
তিন মাস সম্পন্ন হল। এই দীর্ঘ সময়েও তনুর হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়নি, নেই মামলার উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি। মামলার তদন্তকারী সংস্থা এতো দিন জিজ্ঞাসাবাদেই ব্যস্ত রয়েছেন। তনুর খুনি চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার এবং কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা।
এদিকে তনুর মা আনোয়ারা বেগমের আকুতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার। তার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করলে তিনি মেয়ে হত্যার বিচার পাবেন। তিনি মেয়ে হত্যার দিন মাস গুনে গুনে হয়রান। কিন্তু কোন আশার আলো দেখছেন না।
তনুর পরিবারের সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর মরদেহ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি।
শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা- এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না।
সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।
গণজাগরণ মঞ্চ-কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, তনু হত্যা মামলাটির তদন্তে সিআইডি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, তনুর বাবা এবং আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। মৃত্যুর আগে মেয়ের হত্যাকান্ডের বিচার দেখে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে মেয়ে হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ ফেলে অন্তরে শান্তি পেতাম। প্রায় এক বছর যাবত সিআইডির সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। অফিসে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকেও পাওয়া যাচ্ছে না।
তনুর মা আরো বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারী কে বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের কাজে কোনো স্থবিরতা নেই,আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ডিএনএ পরীক্ষা এবং ম্যাচিং করার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। ডিএনএ ম্যাচিংয়ের কাজ চলছে। আমরা ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি।