ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি থেকে যেভাবে বেঁচে ফিরলেন গোলাপগঞ্জের মাহফুজ
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৬:০৭,অপরাহ্ন ১৩ মে ২০১৯ | সংবাদটি ৯২১ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: স্বপ্নের ইতালি পৌঁছার আগেই নৌকাডুবি থেকে বেঁচে ফেরা গোলাপগঞ্জের মাহফুজ আহমদ। কিভাবে নৌকাডুবি ও নিজে বেঁচে ফিরলেন বিবিসি’র সাক্ষাতকারে তা তুলে ধরেছেন মাহফুজ নিজে। পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে আমি রওনা দেই। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দুবাই যাই। সেখান থেকে আম্মান। সেখান থেকে আবার যাই তুরস্ক। তারপর তুরস্ক থেকে লিবিয়ার ত্রিপলি। আমার আপন দুই ভাইও আমার সঙ্গে ছিল। আমরা দালালকে জনপ্রতি নয় লাখ টাকা করে দেই। আমার এই দুই ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। ওরা মারা গেছে।’
এমনটাই বলছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা মাহফুজ আহমদ। তিনি বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে বেঁচে যাওয়াদের একজন। নৌকায় করে লিবিয়া উপকূলের জুওয়ারা এলাকা থেকে ইউরোপের ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন তিনিও। তবে এর আগেই রাবারের তৈরি ‘ইনফ্লেটেবেল’ নৌকাটি ডুবে যায়। এতে অন্তত ৬০ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। নিহতদের মধ্যে ৬ সিলেটির পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
সাগর থেকে ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে তিউনিসিয়ার জেলেরা, এদের মধ্যে ১৪জনই বাংলাদেশী; তাদের একজন সিলেটের মাহফুজ। বর্তমানে রয়েছেন তিউনিসিয়ার উপকূলীয় শহর- জারজিসের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে।
বিবিসি বাংলা তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন কর্মকর্তা মঞ্জি স্লেমের মাধ্যমে বিবিসি বাংলা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। টেলিফোনে তিনি ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন; বলেছেন কীভাবে সাগরে মৃত্যুর মুখ থেকে তারা ফিরে এসেছেন তিনি।
মাহফুজের ভাষায়, ‘আমরা বুঝতে পারিনি এই পথে এত বিপদ। দালাল বলেছিল, মাছের জাহাজে করে সুন্দরভাবে আমাদের নিয়ে যাবে। আমরা অনেক টাকা খরচ করেছি। তিন ভাই মিলে ২৭ লাখ টাকা। জমি বিক্রি করে, আত্মীয়-স্বজনের কাছে থেকে এই টাকা জোগাড় করি। এখন তো এই ভুলের মাশুল তো আর দিতে পারবো না। এখন আমি দেশে চলে যেতে চাই।’
বিবিসিকে নৌ ডুবিতে বেঁচে যাওয়া সিলেটের সিজুর: দেশে ফিরে গিয়ে কি করবো, কোন মুখে দেশে যাব?
‘যে দালালের মাধ্যমে আমরা আসি, তাকে আগে থেকে চিনতাম না। সিলেটে সাইফুল নামে এক লোক, সে আমাদের পাঠিয়েছে। বাকী দালালরা লিবিয়ায়। এরা সবাই বাংলাদেশি। এরা লিবিয়ায় থাকে। একজন দালালের নাম রুম্মান। একজনের নাম রুবেল। আরেকজনের নাম রিপন। এদের বাড়ি নোয়াখালি। এই দালালদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের ক্যাম্পেও আমরা ছিলাম।’
‘সেখানে আরও শ-দেড়শো বাংলাদেশি এখনো আছে। সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, মাদারিপুর, ঢাকা- বিভিন্ন জায়গার লোক আছে সেখানে। এদের সঙ্গে আবার অন্যান্য দেশের দালালরাও ছিল। আমার ধারণা, যে পরিস্থিতির শিকার আমরা হয়েছি, কয়েক মাস পর এই বাংলাদেশিরাও সেরকম অবস্থায় পড়বে। আমি বাংলাদেশ সরকারকে এটা বলতে চাই, আমাদের যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়। আমাদের যেন দেশে ফিরিয়ে নিয়ে সাহায্য করে।’