দাফনের টাকা নিয়েও লাশ ফেলে দিলো নদীতে, পুলিশের উদ্ধার!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫১:৩০,অপরাহ্ন ২৫ মে ২০২০ | সংবাদটি ১৪৭১ বার পঠিত
লালমনিরহাট থেকে সংবাদদাতা:: করোনা উপসর্গ নিয়ে নিহত পোশাক কারখানার শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের মরদেহ তিস্তা নদীতে ফেলে দেয়া ও দাফনে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মৃত্যুর ২ দিন পর ওই নারীর মরদেহ তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রহুল আমিন বাবুল ও ইউএনও মশিউর রহমানের উপস্থিতিতে পুলিশ জানাজা শেষে স্থানীয় কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করেন। মৃত পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তার ওই উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে ও একই উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানান, সরকারের হাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে ৬ মাস আগে বিয়ে হয় পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে একাই গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মৌসুমী।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করলে ট্রাকযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
রংপুরের তাজহাট এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকচালক মৃত দেখে তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে তাজহাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
পরদিন শুক্রবার খবর পেয়ে মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা তাজহাট থানায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন।
মেয়ের মরদেহ বুঝে নিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিসাদকে মোবাইলে বিষয়টি অবগত করে নিজ এলাকায় দাফনের অনুমতি চান। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ওই মরদেহসহ পুরো বাড়ি এবং মরদেহবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফার।
নিরুপায় হয়ে গরিব বাবা মেয়ের মরদেহ দাফন করতে তাজহাট এলাকার একজন লাশবাহী গাড়ি চালককে ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। তারা মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়ে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে মরদেহটি তিস্তা নদীতে ফেলে দেন।
দুইদিন পরে স্থানীয়দের খবরে রবিবার (২৪ মে) রাতে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে সরকারি ব্যাগে মোড়ানো অজ্ঞাত মরদেহটি উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ।
সোমবার ঈদের নামাজ শেষে আদিতমারী থানা পুলিশ মরদেহটির জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নিতেই পরিচয় শনাক্ত করেন মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা। অবশেষে আদিতমারী থানা পুলিশ পাটগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় নিজ গ্রামে মৃত মৌসুমীকে দাফন করে।
মৃত মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, লাশ গ্রামে নিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয় লোকজন হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে একজন চালককে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি দাফন করতে। তারাও দাফন না করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। অবশেষে আবারও মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করতে হলো আদিতমারী থানায়। পুলিশের পাহারায় মেয়ের মরদেহ দাফন করি। মেয়ের মরদেহ নিয়ে যারা ব্যবসা করেছে তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিসাদের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি ব্যাগে মোড়ানো মর্গের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ইউডি মামলা করা হয়েছে। মৃতের পরিচয় জানার পরে মেয়ের বাবার আকুতি শুনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দুই থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে মরদেহ তার গ্রামে দাফন করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন মোহন্ত জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে ওই নারীর দাফন করা হয়েছে। পরিবার অভিযোগ দিলে অব্যশই ব্যবস্থা নেয়া অবশ্যই হবে।