করোনায় বেশি ঝুঁকিতে ধূমপান কারীরা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫২:১২,অপরাহ্ন ০২ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ৭৮০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: করোনা সংক্রমণ এড়াতে সারা বিশ্ব একরকম লকডাউন। উদ্দেশ্য একটাই হিউম্যান চেইন সিস্টেম বন্ধ করা। নিঃসন্দেহে মিলেছে সুফল। তবে সংক্রমণ থেকে সহজে রেহাই নেই ধূমপানকারীদের। মদে আসক্তদেরও নেই ছাড়।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোল্ড স্প্রি হার্বার ল্যাবরেটরি এবং গুগুল ইনকর্পোরেশনের একদল গবেষকদের প্রকাশিত একটি ‘অসম্পাদিত বা নন-পিয়ার রিভিউ’ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রি-প্রিন্ট জার্নাল হিসেবে পরিচিত ‘বায়োর্কাভ’ মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) জমাকৃত Cigarette smoke triggers the expansion of a subpopulation of respiratory epithelial cells that express the SARS-CoV-2 receptor ACE2 শিরোনামের এই গবেষণায় বলা হচ্ছে, সিগারেটের ধোঁয়ায় মানুষের ফুসফুসে SARS-CoV-2 এর গ্রাহক অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম 2 (এসিই 2) এর অস্তিত্ব বা দ্যোতন অনেক বেশি। যে কারণে, এই ভাইরাসে যারা মারা যাচ্ছেন অথবা নিবিড় পরিচর্যায় মধ্যে থাকছেন তাদের ১২.৩ শতাংশই ধূমপায়ী।
ধূমপান বা মদ্যপানকারীদের কোভিড ১৯ সংক্রমণের ভয় রয়েই যাচ্ছে। যার ফলে সংক্রামিত হতে পারে অন্যান্যরাও। ভয়ংকর এই ভাইরাস ঠেকাতে চিকিৎসকরা বারবার বলেছেন, কোনও কিছু খাবার আগে বা হাত মুখে দেওয়ার আগে ভালো করে সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে।
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার খেতে বলা হয়েছে। কোনও পুষ্টি নেই এমন খাবার এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে ধূমপান। সিগারেট খাওয়ার আগে বারবার হাত ধোওয়া হয় না। এদিকে মারাত্মক এই ভাইরাস বাতাসে বহমান না হলেও ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। মুখ থেকে লালারস বেরালেও তা থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ।
ধূমপানের ফলে নিজের সঙ্গে ক্ষতি হয় অন্যদেরও। আশেপাশের মানুষেরও থেকে যায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কোল্ড স্প্রিং হার্বারের ফেলো জেসন শেল্টজারের নেতৃত্বে এই গবেষণায় ধূমপায়ীর সাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের বয়স ও লিঙ্গের বিষয়টিও স্থান পায়।
অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম 2 কী?
SARS-CoV-2 গঠনগতভাবে স্পাইক (S) প্রোটিন, নিউক্লিওক্যাপসিড (N), মেমব্রেন বা ঝিল্লি (M) এবং এনভেলভ (E) প্রোটিন নিয়ে গঠিত।
ভাইরাসটি মূলত এই স্পাইকের মাধ্যমে কোন পোষকের দেহে ঢুকতে পারে। কোষে প্রবেশের জন্য যে গাড়ি বা গ্রাহক হিসেবে কাজ করে Angiotensin converting enzyme 2 (ACE2)। ভাইরাসের স্পাইক যখন গাড়িতে স্পর্শ (যাকে receptor-binding domain বার আরবিডি বলে) করে, সেই স্পর্শিত অংশটি গলে যায়, যাকে গ্লাইকোসাইলেশন বলে, কারণ এই স্পাইক প্রোটিনটির সাথে চিনি বা কার্বোহাইড্রেটের শিকল লেগে থাকে।
মূলত ACE2 মাধ্যমে করোনাভাইরাসে কোষের ভিতর প্রবেশ করে বিভিন্ন অঙ্গতে এদের অভিব্যক্তি বা এক্সপ্রেশন প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই এসিই২ মূলত ফুসফুস, কিডনিতে বেশি কার্যকারিতা প্রকাশ করতে পারে। আর সেখানেই ভাইরাসের সংখ্যাধিক্য প্রকাশ পায়।
ধূমপায়ীরা কেন ঝুঁকিতে?
গবেষকরা দাবি করছে, সিগারেট যারা নিয়মিত খান, তাদের ফুসফুসে এসিই২ মাধ্যমে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তা প্রমাণ করার জন্য তারা প্রথমে ইঁদুরের ফুসফুসে প্রতিদিন ২, ৩, ৪ ঘণ্টা ধরে সিগারেটের ধোঁয়া প্রবেশ করান। এরপর তারা ফুসফুসের ACE2 জিনের এক্সপ্রেশনে দেখেন, যে সিগারেটের ডোজের ভিন্নতায় কোষের ভিতর ACE2 সংখ্যা অধূমপায়ী ইঁদুরের চেয়ে ৮০ শতাংশের বেশি দেখা যাচ্ছে।
পরবর্তীতে গবেষকরা, ধূমপায়ী মানুষের ফুসপুসের বাতাসের থলি বা অ্যালভিওলিতে ফ্রিবওটিক বক্রোসকপি করে দেখেন যে ধূমপায়ীর ফুসফুসে অধুমপায়ীদের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি ACE2 সংখ্যা পাওয়া গিয়েছে।
এছাড়াও তারা দেখছেন, যারা বছরে ৮০ প্যাক সিগারেট গ্রহণ করেন তাদের এই ACE2 প্রোটিনের অভিব্যক্তি প্রায় শতভাগ। আর ধুমপান ছেড়ে দিলেই ৩০ শতাংশ কমে যাচ্ছে।
গবেষকরা মনে করছেন, করোনাভাইরাস ধূমপায়ীদের শ্বশনতন্ত্রে দ্রুত প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ফুসফুসে এই জিনের নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোন রোগ যেমন অ্যাজমা কিংবা ফুসফুস ক্যান্সারের সাথে জড়িত নয় বলে তা গবেষণায় উঠে আসে।
এছাড়া তারা দেখেন যে ধূমপান অভ্যস্তদের শ্লেষ্মা-সিক্রেটিং গোবলেট কোষগুলির প্রতিরক্ষামূলক চাপ দেয় বেশি ফলে ACE2 এক্সপ্রেশন বেড়ে যায়। আর, ধূমপান ছাড়ার ফলে ফুসফুসের ACE2 মাত্রা হ্রাস পায়