মিয়ানমারে সু চির সাথে সেনাদের দ্বন্দ্বের আভাস!
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৯:৩৬,অপরাহ্ন ০৮ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৬৬২ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সংবিধান সংশোধনকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি ও দেশটির সেনা কর্মকর্তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সংবিধানে থাকা সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা হ্রাস করতে চায়। তবে তা মানতে নারাজ সেনা কর্মকর্তারা।
রবিবার (৮ মার্চ) এ বিষয়ে দেওয়া এক বার্তায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলেছে, এ ধরনের পরিস্থিতি কখনোই কাম্য নয়। এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এই পরিস্থিতি মিয়ানমারের ভঙ্গুর গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। খবর ‘ইরাবতী’।
মিয়ানমারে মূলত সেনাশাসন জারি রয়েছে। ২০০৮ সালের আইন অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনের যেকোনো প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হতে হলে ৭৫ শতাংশের বেশি সমর্থন প্রয়োজন। অথচ দেশটির পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনেও রয়েছেন সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। এছাড়া ক্ষুণ্ণ করে রাখা হয়েছে সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার অধিকার।
সম্প্রতি পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা হ্রাস সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করে সু চির দল এনএলডি। এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সাংবিধানিক সংস্কার সম্পর্কিত সংসদীয় বিতর্কে অংশ নেন আইনপ্রণেতারা। সর্বমোট ১৪৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে সেনা নিযুক্ত আইনপ্রণেতা ও এনএলডি থেকে ৫০ জন করে, ইউএসডিপি থেকে ২৬ জন এবং জাতিগত দলগুলোর সদস্যরা এই আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় এনএলডির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সামরিক বাহিনী বলেছে, সেনাবাহিনীর শক্তি দুর্বল করা হলে মিয়ানমারকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী বলেছে, এ ধরনের হুমকি দেশটির ভঙ্গুর গণতন্ত্রের উত্তরণকে প্রভাবিত করতে পারে। সামরিক বাহিনীর তীব্র বিরোধিতার মুখে এনএলডির পরবর্তী সংশোধনী প্রস্তাবগুলো পার্লামেন্টে পাস করা কঠিন হবে।
সু চির দলের অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল মিয়ানমারের সেনানিয়ন্ত্রিত সংবিধান সংশোধন করা। তবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় তিন বছর পর ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো সু চির দলের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আলোচনার জন্য গৃহীত হবে কিনা- এই বিষয়ে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে সেনাপ্রধান নিয়োগকৃত ও অনির্বাচিত ২৫ শতাংশ সেনা এমপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
তবে সেনাবাহিনী ভোটাভুটি বর্জন করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য গৃহীত হয়। সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্বকারী কোনো আইনপ্রণেতার উপস্থিতি ছাড়াই সে সময় অনুষ্ঠিত হয় বিতর্ক। আর বিতর্ক শেষে সংবিধান সংশোধন উদ্যোগ সফল করতে একটি কমিটি গঠনের ব্যাপারে সম্মত হয় মিয়ানমারের পার্লামেন্ট। তখন সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ৩৭৬০টি প্রস্তাব সম্বলিত একটি প্রতিবেদন মিয়ানমারের পার্লামেন্টে জমা দেওয়া হয়।
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া বিতর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী প্রস্তাব ছিল সামরিক বাহিনীর ভেটো ক্ষমতা প্রত্যাহারের বিষয়টি। তবে সেনানিযুক্ত আইন প্রণেতাদের নেতৃত্বদানকারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মং মাং প্রস্তাবিত সংশোধনীকে সেনাপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত সামরিক সদস্যদের বিরুদ্ধে বৈষম্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এই ধরনের বৈষম্য নাগরিক-সামরিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মিয়ানমার যে জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে চলছে, তাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে সামরিক বাহিনীর সহযোগী ইউএসডিপির আইনপ্রণেতা ইউ টিন আই বলেন, এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর আসন হ্রাস করা ঠিক হবে না।