‘এ ঘটনায় আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেলো’: স্বামীকে পাপিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫৭:০০,অপরাহ্ন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৫৪০৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশজুড়ে আলোচনায় আওয়ামী যুব মহিলা লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া।
রাজনীতির আড়ালে অস্ত্র, মাদক ও দেহব্যবসা করে বিশাল সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। তার সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতেন তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে শামিমা নূর পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গ্রেপ্তার চারজনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তিন মামলায় পাপিয়া ও সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমানের আদালতে এক মামলায় ৫ দিন ও মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট জসীম উদ্দিন দুই মামলায় ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অর্থ্যাৎ তিন মামলায় দুইজনের ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর অন্য দুই আসামি সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে এক মামলায় ৫ দিন করে রিমান্ড দেন আদালত।
আদালতে পাপিয়া সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছিলেন। তার মাথায় ওড়না ছিল। আদালতে শুনানি চলাকালে পাপিয়া ও সুমন নিশ্চুপ ছিলেন। কিন্তু শুনানি শেষে বের হওয়ার সময় স্বামীকে লক্ষ্য করে অনুচ্চ স্বরে বলেন ‘এ ঘটনায় আমার লাইফটা শেষ হয়ে গেলো।’
রাজধানী ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ নামে-বেনামে বিপুল অর্থের সন্ধান পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করে অর্থ আয় করতেন তিনি। এছাড়া, রেলওয়ে ও পুলিশে এসআই পদে চাকরির কথা বলে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
প্রাথমিক তদন্তে ফার্মগেটে পাপিয়ার ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার কথা জানা গেছে।
পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন রেলওয়ে ও পুলিশের এসআই’তে চাকরির প্রলোভনে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বাইরে নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে বলে জানা গেছে।
আরো জানা যায়, পাপিয়ার আয়ের আরেকটি অন্যতম উৎস নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে কম বয়সী মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হত। যাদের অধিকাংশই নরসিংদী এলাকা থেকে চাকরির প্রলোভনে ঢাকায় আনা হয়েছিলো। অনৈতিক কাজে বাধ্য না হলে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হত।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) গ্রেপ্তারের পর রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে র্যাব।