স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয়দানকারী নারীসহ গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৩:৪৭,অপরাহ্ন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৬৪৩ বার পঠিত
কক্সবাজার থেকে সংবাদদাতা:: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয়ে কক্সবাজার সৈকতের পর্যটন এলাকার ‘অপরাধের কিং’ হিসেবে পরিচিত কাজী রাসেল আহমদ নোবেলকে এক নারীসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতে কলাতলীর সৈকত পাড়ার একটি নির্মাণাধীন বাসা থেকে রাসেল ও আরেক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাসুম খান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি ছড়িয়ে ‘মন্ত্রীর ভাগ্নে’ পরিচয়ে তিনি পর্যটন এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কাজী রাসেল (৩৩) কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর লাইটহাউজ এলাকার মৃত কাজী তোফায়েল আহমদের ছেলে। তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য এবং কলাতলী কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি। তার সঙ্গে আটক আসমা হুসনা মীম (২৭) নামে যে নারীকে আটক করা হয় তিনি ঢাকার দোহারের জয়পাড়ার মৃত আবদুল মজিদের মেয়ে।
কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাসুম খান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন এলাকার কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পরিচয়ে কাজী রাসেল নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। প্রায় সময় তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যেত।
সম্প্রতি মোরশেদ নামের এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে রাসেল। ওই ঘটনায় তাকে এক নম্বর আসামি করে মডেল থানায় মামলাও হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে মীম নামে ঢাকার দোহারের এক কণ্ঠশিল্পীসহ তাকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তারা ইয়াবা সেবন করছিল।
কাজী রাসেলকে আটকের পর থেকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ওসি মানস বড়ুয়া ও সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাসুম খান মিলে রাসেলকে কেক খাওয়ানোর এই ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলাতলীর সৈকত এলাকার নির্মাণাধীন ওই বাসাটি দখলের জন্য কাজী রাসেল আরও কয়েকজনকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। পুলিশ সেই বাসার সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকে রাসেলসহ ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ইয়াবা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়। কিন্তু তদবিরের ফলে ছাত্রলীগের সেই নেতাকে ‘ছেড়ে দেওয়া’ হয়। লুকিয়ে ফেলা হয় উদ্ধার করা অস্ত্রটিও।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন বলেন, কাজী রাসেলকে নারীসহ আটক করা হয়েছে। এ সময় অস্ত্র বা অন্যকিছু পাওয়া গেছে কিনা তা সদর থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহাজান কবির জানাননি। এরপরও বিষয়টি সম্পর্কে খবর নেওয়া হচ্ছে। রাসেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তাকে আটকের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলাতলী পর্যটন জোনের স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা জানান, কাজী রাসেলের অপরাধের রাজ্য বিস্তৃত। তার বড় ভাই পৌর কাউন্সিলর কাজী মোরশেদ আহমদ বাবুর তিন শ্যালক মাসুদ, খালেদ ও মাহফুজ এবং স্থানীয় ওয়াজেদ, মান্নানসহ ১৫-২০ জনের একটি দল ঢাকার বাড়ি, শারমিন, সবুজ, আমীর ড্রিমস, সী-টাউন, কমফোর্টসহ বেশ কয়েকটি কটেজে পতিতা, ইয়াবা এবং বিভিন্ন ধরণের মাদক সরবরাহ করতেন। কলাতলী সড়কের পূর্বপাশের প্রায় প্রতিটি গেস্ট হাউজ এবং ফ্ল্যাট থেকে কাজী রাসেলের হয়ে নিয়মিত টাকা তুলতেন মান্নান। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা অবৈধভাবে আয় করতেন তিনি।
তারা আরও জানান, পর্যটন এলাকায় নির্মাণাধীন বা তৈরী হওয়া অনেক অ্যাপার্টমেন্ট এবং ভবন ও হোটেলের কক্ষ, ফ্ল্যাট বা পুরো ফ্লোর দখলে নিয়ে ভাড়া দিতেন কাজি রাসেল ও তার সহযোগীরা। কলাতলী সড়কের পশ্চিম পাশে খালি পড়ে থাকা সরকারি অর্ধ-ডজন প্লট দখল করে ঘের ও ঝুপড়ি ঘর তুলে ভাড়া দিয়ে আসছেন কাজি রাসেল।
ঢাকার এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে তোলা কয়েকটি ছবি ফেসবুকের মাধ্যমে ও ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে ছড়িয়ে নিজেকে ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাগ্নে’ হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারাও এ কারণে তার বিষয়ে নমনীয় ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে নিজেকে কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় অপরাধের ‘অপ্রতিদ্বন্ধি কিং’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এদিকে, কাজী রাসেলকে আটকের পর থেকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ওসি মানস বড়ুয়া ও সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাসুম খান মিলে রাসেলকে কেক খাওয়ানোর একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাসুম খান বলেন, অপরাধী ধরতে গেলে অনেকসময় অপরাধীর সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়তে হয় আমাদের। এটি এমনই একটি পদ্ধতির চিত্র। তার অপকর্মের খবর পেয়ে তা খতিয়ে দেখতেই আমরা তার কাছে গিয়ে মেশার চেষ্টা করেছি।
ওসি মাসুমের মতো একই বক্তব্য দিয়েছেন ডিবির ওসি মানস বড়ুয়াও।
কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, অপরাধীর কোন দলের হতে পারে না। দলীয় পরিচয়ে অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। কাজী রাসেলের দায় দল নিবে না। তা বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাজী রাসেল আটক এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার ভাই কাউন্সিলর কাজী মোর্শেদ আহমেদ বাবুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।