ধর্ষক মজনু রিমান্ডে শুনালো তার ‘প্রেম’ কাহিনি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৭:৫১,অপরাহ্ন ১০ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৩০৬৪৭ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘ভবঘুরে’ মজনু পুলিশকে এবার তার প্রেমের কাহিনি শুনিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে ৭ দিনের রিমান্ডের প্রথমদিনই সে তার জীবনের নানা কাহিনী তুলে ধরে।
মজনু ডিবিকে জানায়, মাস দেড়েক আগে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায় আরেক ‘ভবঘুরে’ নারী জেসমিনের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেও বিভিন্ন রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়াত। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় তার। এরপর প্রেমের সম্পর্ক। তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে মজনু।
দু’জন মাস খানেকের বেশি রাজধানীর শেওড়া, বনানী ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে কাটিয়ে দেয়। তবে কয়েকদিন আগে জেসমিন এক সিএনজি অটোরিকশা চালকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এরপর প্রেমিকের শোকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় সে।
মজনু জানায়, কয়েক বছর ধরেই নানাভাবে পথশিশু, ভবঘুরে নারীদের ফুসলিয়ে আবার কাউকে ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে আসছিল সে। রিমান্ডে মজনু যত মুখ খুলছে, ততই বেরোচ্ছে কুৎসিত কাহিনি।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর বুধবার মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবির কাছে তুলে দেওয়া হয় মজনুকে। এরপর বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে।
মজনু জানিয়েছে, তার কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কখনও সে ট্রেনে চট্টগ্রাম, আবার কখনও নারায়ণগঞ্জ, কখনও গাজীপুরে চলে যেত। রেললাইন ও আশপাশ এলাকায় রাত কাটাত সে। দীর্ঘদিন ধরে তার চুল নোংরা ও জটলাগা অবস্থায় ছিল। তবে জেসমিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার পর তা কেটে ছোট করে সে। জেসমিনেরও নোংরা জটলাগা চুল ছিল। সেই চুলও কেটে দেয় মজনু। সপ্তাহে দু-একদিনের বেশি গোসলও করা হয় না তার।
ভবঘুরের মতো যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ানোয় সবাই তাকে ‘পাগলা মজনু’ নামে ডাকে। শেওড়া, বনানী, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় এক নামে সবাই তাকে ‘পাগলা মজনু’ নামে চেনে।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মজনু আরও জানায়, রবিবার (৫ জানুয়ারী) কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে টার্গেট করার সময় তার পরিচয় সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না তার। সে মনে করেছিল, বিকৃত স্বভাবে প্রায় নিয়মিত যেভাবে ‘শিকার’ ধরে থাকে এটাও তাই ছিল। এমনকি টার্গেট করা ওই তরুণীকে নিয়ে রেললাইনে ‘লালন-পালন’ করে সঙ্গে রাখবে এমন কথাও ভাবতে থাকে সে।
রাত গভীর হলে ওই তরুণীকে রাস্তার ওপারে রেললাইনে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান ছিল তার। এজন্য সে দীর্ঘ সময় তার পাশে বসে থাকে। তবে ওই ছাত্রী যখন বারবার বাধা দিচ্ছিল, তখন ঘাবড়ে যায় মজনু। এক পর্যায়ে তার ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে সে উপলব্ধি করে, ভুল টার্গেটে হাত দিয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত হতে বারবার মেয়েটির নাম-পরিচয় ও কোথায় পড়াশোনা করছে তা জানতে চেয়েছিল ওই সে। অবশেষে ভুল করে ‘বড় কোনো মানুষকে টার্গেট করেছে, এটা বুঝতে পারে মজনু।
ডিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, নদীতে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে যায় মজনু। সেখানে কিছুদিন রিকশা চালায় সে। এরপর রোকসানা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে। পাঁচ-ছয় বছর আগে মাটিবাহী ট্রাকের ধাক্কায় রোকসানা বিমানবন্দর এলাকায় মারা যায়। ওই দুর্ঘটনায় মজনুর দুটি দাঁত পড়ে যায় এবং আঙুল ভেঙে যায়। যদিও র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ট্রেনের ছাদে ওঠার পর গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তার দাঁত ভাঙার কারণ বলেছিল।
মজনু জানায়, বর্তমানে তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। তবে কখনও রেলস্টেশনে ভিক্ষা করত। আবার কখনও পুরোনো পেপারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করত। এ বাবদ যে টাকা পেত, তা দিয়ে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
ভাসমান যৌককর্মীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে যে টাকা লাগে, তা ব্যয় করার সামর্থ্য তার ছিল না। তাই রেললাইনে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন নারী, প্রতিবন্ধী নারী-শিশু ও ভিক্ষুকদের টার্গেট করত সে।
ছাত্রী ধর্ষণের মামলার তদন্ত তরক কর্মকর্তা ডিবির উত্তর বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘মজনু বিকৃত মানসিকতার। জিজ্ঞাসাবাদে সে অনেক তথ্য দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়া’নস্টপ ক্রাই’স সে’ন্টা’র (ওসিসি) থেকে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) দুপুরে ছাড়পত্র পেয়েছেন ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ব’বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
এখন থেকে ওই শিক্ষার্থী একটি শেল্টার হোমে থাকবেন। তবে শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা বিবেচনায় শেল্টার হোমের ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।
হাসপাতাল ছাড়ার আগে ওই ছাত্রীর বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী, হাসপাতাল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমসহ সবাই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, মেয়েটি খুব সাহসী। এত বড় একটি বিষয় ফেস করেছে। হাসপাতালসহ সবার সহযোগিতা পাওয়ায় মেয়েটি বড় কোনো ট্রমার মধ্যে ছিল না। তার চিকিৎসায় সাত সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
ধর্ষণের কারণে মেয়েটি যাতে কোনো সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত না হয়, তার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেয়েটিকে ফলোআপে আসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, ছাত্রীর বাবা তাকে হাতে লেখা একটি চিঠি দিয়েছেন। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। বাবা যেহেতু সবার সামনে এসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবেন না, তাই চিঠিটি লিখেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, রবিবার (১২ জানুয়ারি) ওই ছাত্রীর বিভাগীয় ফাইনাল পরীক্ষা। ওই পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওই ছাত্রী।