দলীয় ও সংসদীয় পদ হারাচ্ছেন রাঙ্গা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৩:২৩,অপরাহ্ন ১৪ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ১৪৯৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: সমালোচিত রাঙ্গার দায় নিতে চাচ্ছে না জাতীয় পার্টি। তাকে বর্তমান পদ থেকে সরানোর জন্য একাট্টা জাপার জ্যেষ্ঠ নেতারা। সংসদের মিত্র দলগুলোও বিতর্কিত রাঙ্গামুক্ত সংসদ দেখতে চান বলে গত দুদিন ধরে অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা হয়েছে।
পার্টি থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে। কেন্দ্র থেকে রাঙ্গার নির্বাচনী আসনবাসীরা (রংপুর-১) এ দাবি তুলেছেন।
রংপুরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বামপন্থি সংগঠনগুলো সমস্বরে তার বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন পার্টি প্রধানের কাছে। রাজপথের মতো সংসদও উত্তপ্ত রাঙ্গাকে নিয়ে। তাকে মদের দোকানের ম্যানেজার থেকে মন্ত্রী বানানোর জন্য সংসদকেই দায়ী করেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সংসদ অধিবেশনে অংশ নিয়ে নূর হোসেন ইস্যুতে ক্ষমা চেয়েছেন রাঙ্গা। তবে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক বিষয় অস্বীকার করেছেন। ক্ষমার আবেদন করলেও মঞ্জুর হচ্ছে কি না তা নির্ভর করছে জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ওপর।
জাপা ও সংসদ সূত্র জানিয়েছে, সংসদের চিফ হুইপের পদ হারাচ্ছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। হারাতে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদটিও। তবে এ নিয়ে এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের দিকে তাকিয়ে আছে জি এম কাদের গ্রুপ। আবার উভয় গ্রুপই তাকিয়ে আছে বিশেষ কক্ষের দিকে। সব মিলিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গার রাজনৈতিক পদগুলোর আগে ‘সাবেক’ বসতে যাচ্ছে— এমন খবর চাউর জাতীয় পার্টির ঘরে-বাইরে।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বৈরশাসকখ্যাত এরশাদকে গণতন্ত্রের ‘ধারক-বাহক’ আখ্যা দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি। ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের পর থেকেই রাঙ্গার অতীত-বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা সব মহলে। গতকাল বুধবারও রংপুরে সর্বদলীয় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। তাকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে কয়েক দফায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
রাঙ্গা সম্পর্কে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মন্তব্য, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাঙ্গার পরিবারের অবস্থান ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। অভিযোগ আছে, মশিউর রহমান রাঙ্গা একসময়ে রংপুর শহরের মদের কারবারি লালু বাবুর দোকানের ম্যানেজার ছিলেন। পরে জোর করে বিয়ে করেন লালু বাবুর মেয়েকে। নানা পেশায় জীবিকা নির্বাহের একপর্যায়ে বাস মালিক সমিতির নেতা হন রাঙ্গা।
রংপুরের শ্রমিক নেতা আকরাম হত্যার পর শহরে আলোচিত হয়ে ওঠেন জাকের পার্টি থেকে যুবদল এবং পরে জাপায় আসা রাঙ্গা। জাপা মহানগর এবং পরে মহাসচিবের দায়িত্বে থাকায় জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই হয়েছে জাতীয় পার্টিতে।
স্থানীয় জাপা নেতাদের অভিযোগ, রংপুরে জাতীয় পার্টির কিছু নেতাকর্মীকে লালন করেন রাঙ্গা। ওইসব নেতাকর্মীর বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির থেকে এনে জাপায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম রংপুর মহানগর জাপার যুগ্ম মহাসচিব জাকির হোসেন। তিনি জামায়াতের রুকনের দায়িত্বে ছিলেন। একসময়ে ছাত্রশিবির রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি শাফিয়ার আহমেদ শাফিকে জাপার জেলা কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবারও জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘একটা কথা আছে, বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। এই লাই আমরা দিইনি। এই সংসদ তাকে লাই দিয়েছে। কী ধরনের ব্যক্তিত্ব; যার অতীত নেই-বর্তমান নেই। কিছুই ছিল না। হঠাৎ তাকে মন্ত্রী বানানো হলো। আমরা তো তাজ্জব হয়ে গেলাম।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে রাঙ্গা কটূক্তি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলার ধৃষ্টতা তিনি কোথায় পেলেন? প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কথা বলেছেন। গণতন্ত্রের ছবক দেন।
লেখাপড়া জানেন না, আবার কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহন শ্রমিক হয়ে হঠাৎ বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছেন। ধৃষ্টতা দেখান তিনি। আর তার জবাব দিতে হয় আমাদের। আসামিদের কাঠগড়ায় আমাদের দাঁড়াতে হয়। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। আমরা দুঃখিত। ওই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়। এটা রাঙ্গার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে।
ওই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত, আমরা দুঃখিত এবং আমরা এর জন্য অপমানিতবোধ করছি। জাতীয় পার্টি এ বক্তব্য সমর্থন করে না।
মসিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও তার বক্তব্য নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘মসিউর রহমান রাঙ্গা সংগঠনের সভাপতি। তবে তার এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে আমরা বিব্রত। সংগঠনের নির্বাহী সভায় এ নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। তবে তার আগেই (গতকাল) তো সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন।’
এদিকে জাপার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের মতো মসিউর রহমান রাঙ্গার নামও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাড়ায় বহুল আলোচিত হয়ে উঠেছে। তবে দুদকের তরফ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
রাঙ্গার বিরুদ্ধে অভিযোগ, জাতীয় পার্টি মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন ৫ কোটি টাকার চুক্তিতে। প্রথম দফা চেকের মাধ্যমে রাঙ্গাকে দেওয়া হয় দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধের চুক্তি হলেও এক মাস পর বাকি টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া শুরু করেন রাঙ্গা।
একপর্যায়ে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে, গণমাধ্যমে মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর বরাতে সংবাদও প্রকাশিত হয়। সে সময় ক্ষুব্ধ রাঙ্গা মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীকে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে একতরফা অব্যাহতি দেন। পরে জি এম কাদের মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নেন।