রিফাত হত্যায় নতুন ভিডিও, বাঁচতে পারেন ‘মিন্নি’!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৫:০৩,অপরাহ্ন ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৭২২ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সময়কার একটি ভিডিও ভাইরাল এখন সোশাল মিডিয়ায়, যাতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে একাই রক্তাক্ত স্বামীকে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে।
রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর মামলায় সাক্ষীর তালিকায় মিন্নির নাম থাকলেও পরে খুনের ঘটনায় তাকেই আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বিভিন্ন সময় দাবি করেছিলেন, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে তার ছেলের উপর হামলার পর পুত্রবধূ মিন্নি আর কোনো খবর নেননি।
তবে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের একটি সিসি ক্যামেরায় ধারণা করা সদ্য প্রকাশিত ভিডিওতে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, হামলায় রক্তাক্ত রিফাতকে নিয়ে সকাল ১০টা ২১ মিনিটের সময় মিন্নি একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে আসেন।
এ সময় সেখানে দাঁড়ানো মামুন নামের একজন রিকশার দিকে দৌড়ে আসেন। এরপর তিনি দৌড়ে হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিকশার পাশে আসেন। তখন উপস্থিত অনেকেই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এরপর রিকশা থেকে নামিয়ে রিফাতকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর মিন্নি হাসপাতালের সামনে উপস্থিত একজনের ফোন নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের ভেতরে যান। এর কিছু সময় পর মিন্নির বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন কিশোরকে হাসপাতালে দেখা যায়।
কিছু সময় পর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি সামনে আনা হয়। ১০টা ৪৪ মিনিটে অক্সিজেন ও দুটি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাতকে স্ট্রেচারে করে ওই অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি ১০টা ৪৯ মিনিটের সময় বরগুনা হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ছেড়ে যায়।
রিফাতকে সেদিন বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি ও বরগুনা জেলা পুলিশের একটি সিসি ক্যামেরা আছে। তবে এই ভিডিওটি কোন ক্যামেরার ধারণ করা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়ার পর কারামুক্ত হয়ে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসায় অবস্থান করছেন মিন্নি। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বিষয়ে মিন্নির সাথে কথা বলেনি এই প্রতিবেদক। তবে এ বিষয়ে মিন্নর বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, হাসপাতালের সামনের এই ভিডিওটি আমি সংগ্রহ করে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে দিয়েছি। মিন্নি যে রিফাত শরীফতে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তা কলেজের সামনের ভিডিও এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভিডিওতে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত। আমার মেয়ে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই কলেজের সামনের ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে কিন্তু হাসপাতালের সামনের এই ভিডিওটি গোপন করার চেষ্টা করা হয়ছে। কিন্তু তা পারেনি। তিনি বলেন, এরকম আরো একটি ভিডিও আমার সন্ধানে আছে। আমি সেই ভিডিওটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
নতুন সিসিটিভির এই ফুটেজটি নিয়ে কথা বলতে গেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, এটি পুরোনো ঘটনা। আহত রিফাত ঘটনাস্থল থেকে হেঁটে গিয়ে রিকশায় ওঠেন। পরে মিন্নিও ওই রিকশায় চড়ে তার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এতে মিন্নি নির্দোষ এটা প্রমাণিত হয় না।’
এই সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়টি চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন কী না জানতে চাইলে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ যা কিছু দরকার চার্জশিটে উল্লেখ করেছি। এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই।’
এ ব্যাপারে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজই নয়, বিষয়টি মিন্নি প্রথম থেকেই আমাদের বলেছেন। তিনি আদালতেও এটি বলেছেন। ভিডিওটি এখনও দেখিনি। এমনকি চার্জশিটের কপিও দেখিনি। তবে তদন্ত কর্মকর্তা যদি চার্জশিটে বিষয়টি উল্লেখ না করে থাকেন, সেটি হবে চরম ভুল।’
গত ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন