বিশ্বনাথের ফরিদের লাশ আনতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে শফিক চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৫:৩১,অপরাহ্ন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৬৩৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়ার গভীর জঙ্গলে মারা যাওয়া সিলেটের বিশ্বনাথের ফরিদ উদ্দিনের লাশ দেশে আনতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমিনের সহযোগিতা চাইলেন বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। ফরিদ বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমসাদ আলীর পুত্র। তিনি পেশায় ব্যাংকার।
গত প্রায় দু’সপ্তাহ আগে স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে তিনি মারা গেলেও তার মরদেহ দেশে আনার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কেউ। অবশেষে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে লাশ আনতে ফরিদের পরিবারের আবেদনটি পৌঁছে দেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। এসময় ফরিদের লাশ দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ফরিদ উদ্দিন গত ২ সেপ্টেম্বর দালাল ও ৫ সঙ্গীর সাথে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথিমধ্যে স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ৭দিন পর ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গল (দূর্গম পাহাড়ি এলাকা) থেকে ফরিদের লাশ উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ।
স্লোভাকিয়ার ‘জওজে টিভি’র বরাত দিয়ে সে দেশের ‘নোভেনী ডট এসকে’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদটি প্রচার করে। প্রকাশিত ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয় ‘আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ইউরিপিয়ান নাগরিক নন এমন একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গলে একজন পর্যটক দেখতে পান। তাৎক্ষণিক তিনি উদ্ধারকারী ও পুলিশকে বিষয়টি অবিহত করেন। এরপর পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল লাশ উদ্ধার করে।’
ওই সংবাদটি নিখোঁজ ফরিদ উদ্দিনের বৃটেনে থাকা স্বজনরা দেখতে পান। তখন স্লোভাকিয়ার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করেন এবং ই-মেইলে ফরিদের তথ্য পুলিশকে প্রদান করেন। উদ্ধারকৃত লাশটি নিখোঁজ ফরিদের হিসেবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এরপর ফরিদের চাচা আলকাছ আলী (আওলাদ) বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুজন বৃটিশ নাগরিককে সঙ্গে করে যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়ায় যান। তারা সেখানে পৌছে কৌচি শহরের একটি মর্গে গিয়ে ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ সনাক্ত করেন। তবে কিভাবে ফরিদ উদ্দিন আহমদের মৃত্যু হয়েছে এর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
ফরিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখানে দীর্ঘ কয়েক মাস অবস্থান করেন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য রাশিয়ায় অবস্থানরত দাদা নামে পরিচিত দালাল লিটন বড়ুয়ার সাথে চুক্তি করেন ফরিদ। দালাল লিটন বড়ুয়ার বাড়ি চট্রগ্রাম জেলায়। সেই চুক্তি অনুযায়ী দালাল লিটন বড়ুয়ার এজেন্ট বাংলাদেশে থাকা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কামাল নামের এক দালালের কাছে ৭ লাখ টাকা জমা রাখেন ফরিদের পরিবার।
চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিল মাত্র ২ঘণ্টা পায়ে হেটে এবং বাকী রাস্তা বৈধভাবে গাড়িতে করে ফরিদকে ফ্রান্স পৌঁছানোর পর জমাকৃত ৭ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হবে দালালের কাছে। চুক্তি সম্পাদনের পর ইউক্রেনে দালালের শিবিরে গিয়ে প্রায় ১ মাস সেখানে অবস্থান করেন ফরিদ। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন ফরিদ। এসময় তিনি জানান- পরদিন (২৮ আগস্ট) ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে অন্য সঙ্গীদের সাথে যাত্রা করবেন ফরিদ। এই কথা বলার পর থেকে পরিবারের সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি ফরিদের।
এরপর সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফরিদের ফ্রান্স যাত্রাপথের এক সঙ্গী ফোন করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তার (ফরিদ) ভাই কাওছার আলীকে ফোন করে জানান- গত বুধবার (২৮ আগস্ট) একজন দালালের সঙ্গে ফরিদ উদ্দিনসহ তারা ৬ জন ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পায়ে হেঁটে ফ্রান্স পৌঁছতে তাদের ৫ দিন সময় লাগে। কিন্ত তাদের সাথে খাবার ছিল মাত্র দু’দিনের। তাই সাথে থাকা খাবার শেষ হয়ে গেলে তাদেরকে শুকরের মাংস খেতে দেয় দালাল। কিন্ত এই খাবার খেতে অপারগতা জানান ফরিদ। তাই তিনি সাথে থাকা খেজুর খেয়ে আরোও একদিন কাটান।
দুই দিন পায়ে হেঁটে তারা পৌঁছেন স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে। সেখানে পৌঁছার পর সাথে থাকা খেজুরও শেষ হয়ে গেলে শুকরের মাংস খেতে বাধ্য হন ফরিদ। এই খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদ। নাকে ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে এবং বমি আর ডায়রিয়া হতে থাকলে একেবারেই দূর্বল হয়ে যান তিনি। ওই জঙ্গলে সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একটি বিকট শব্দ পেয়ে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় ঘুম থেকে উঠে ফরিদকে তাদের (সঙ্গীদের) সাথে দেখতে না পেরে রাঁতের অন্ধকারেই খুঁজতে শুরু করেন তারা। কিন্ত কোথাও ফরিদকে খুঁজে না পেয়ে একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই তাকে ছাড়াই ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে দালাল ও ফরিদের সঙ্গীয় অন্য ৫ জন এবং ২ সেপ্টেম্বর তারা ফ্রান্স পৌঁছেন। তাদের মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার নাজির, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সোহাগ এবং দিলদার ও বুরহান নামের আরো ২জন ছিলেন।
নিহত ফরিদ উদ্দিন আহমদের ভাই আলাউদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন বলেন ‘আমরা ধারণা করছি আমার ভাইকে স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গলে হত্যা করে সেখানেই ফেলে রেখে দালাল ও তার সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যায়। নিখোঁজের পর থেকে তারা (দালাল ও ফ্রান্স যাত্রাপথের ফরিদের সঙ্গীরা) আমাদেরকে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে ভাই (ফরিদ) এখনও জীবিত রয়েছেন বলে আমাদেরকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আসছে।’ তারা বলেন, মাত্র ২ঘণ্টা পায়ে হেটে এবং বাকী রাস্তা বৈধভাবে গাড়িতে করে ফ্রান্স পৌঁছানোর কথা বলে দালালেরা আমাদের ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করেছে ও হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।’