১৭ বছরেও কার্যকর হয়নি পলিথিন নিষিদ্ধের আদেশ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৫:১৩,অপরাহ্ন ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৫২৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: দেশে পলিথিন নিষিদ্ধের আদেশ দীর্ঘ ১৭ বছরেও কার্যকর করতে পারেনি সরকার। ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করা হলে মাঝেমধ্যে কিছু অভিযান চলে কারখানায়। বন্ধও করা হয়। কিন্তু পরে আবার চালু হয় সেগুলো। আর বাজারের বিভিন্ন গলি-ঘুপচিতে কেজি দরে বিক্রি হয় এই নিষিদ্ধ পণ্য। সেখান থেকে তা যায় দোকানে দোকানে। পলিথিনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি, এটা কারো অজানা নয়। তবুও দেশবাসীর যেন তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই।
দেখা যায়, মাছ, সবজি বা প্রতিদিনের নিত্যা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে যাওয়া মানুষের হাতে ব্যাগের দৃশ্য এখন বিরলই বলা যায়। কারণ, বিক্রেতারা সস্তার পলিথিনে পণ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে ক্রেতাকে। নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যেই এই ব্যাগে পণ্য নিয়ে ফিরছেন তারা। শুধু কাঁচাবাজারের বেলায় এমনটি হচ্ছে তা নয়, কিছু অভিজাত বিপণি ছাড়া প্রায় সব ধরনের কেনাকাটায় ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগে ভরে।
অথচ এই চিত্র নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকেও ছিল না। প্রতিটি বাড়িতে বাজারের ব্যাগ ছিল একটি সাধারণ চিত্র। চটের একাধিক ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেত মানুষ। একটি মাছ-মাংসের জন্য, অপরগুলো শুকনো পণ্যের জন্য। কিন্তু পলিথিনের সহজলভ্যতায় এই অভ্যাস ভুলে গেছে দেশের মানুষ।
সবজি, ফল, মাংস, চাল এবং মুদির দোকান পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে প্রায় সবাই পণ্য কিনে তা নিয়ে যাচ্ছেন পলিথিনে করে।
চাহিদা না থাকায় চটের ব্যাগ পাওয়া যায় এমন দোকানের সংখ্যা খুবই কম। আর ক্রেতারাও বেশি পরিমাণ বাজার ছাড়া চটের ব্যাগ কিনতে চান না।
কারওয়ানবাজারে সারি সারি পলিথিনের দোকান রয়েছে। সেখানে কথা হচ্ছিল পাইকারি দোকান ‘শিপন প্যাকেজিং স্টোর’ এর কর্মী গাউছুলের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ১৩ থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের রঙিন পলিথিন পাইকারি দরে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি করেন। এরচেয়ে সামান্য বড়গুলো বিক্রি করেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
পলিথিনে করে পণ্য কিনে যাচ্ছিলেন এক ক্রেতা। এর ক্ষতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে ব্যাগ আনা হয় না। তার জন্য পলিথিনে করে বাজার নিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া ব্যাগ সঙ্গে করে বহন করা খুব ঝামেলা।’
কাঁঠালবাগান বাজারে গিয়ে দেখা যায় এক নারী পলিথিনের ব্যাগে করে চাল নিয়ে যাচ্ছেন। খানিকটা পথ যাওয়ার পর ব্যাগের নিচের অংশে ছিঁড়ে সব চাল রাস্তায় পড়ে যায়। খানিকটা চাল ময়লাসহ কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় নিজেই বলছিলেন, বাজারের ব্যাগ না আনায় এই সর্বনাশ হয়েছে।
২০০২ সালে সরকার আইন করে পলিথিন নিষিদ্ধ করে সরকার। তখন বাজারে ব্যাগের ব্যবহারের পাশাপাশি কাগজের ঠোঙা বিক্রি হতো। কিন্তু যথাযথ আইনের প্রয়োগ না হওয়া অল্প কিছু দিন পলিথিন নিষিদ্ধ থাকলেও আবার নিষিদ্ধ পলিথিনে ভরে যায় বাজার।
আইন অনুযায়ী পলিথিন উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণে প্রথম অপরাধে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরের প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন দুই বছর, অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অন্তত দুই লাখ টাকা, অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা।
বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে অন্যূন দুই বছর, অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন দুই লাখ টাকা, অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা।
শাস্তি কম না। তবু কেন পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করা যাচ্ছে না? বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন গণমাধ্যমকে জানান, ‘আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার কারণেই নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধ করা যাচ্ছে না। অথচ আমরা সবাই জানি পলিথিন পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর তারপরও দিন দিন এটার ব্যবহারকে বাড়াচ্ছি। সরকার কেন আইনের প্রয়োগ দিয়ে এটা বন্ধ করছে না সেটাই আমার বোধগম্য নয়।’