নেশার টাকা না পেয়ে মাকে পুড়িয়ে দিলো ছেলে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫৮:৫০,অপরাহ্ন ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৪৬৮ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: নেশার টাকা না পেয়ে ঘরের ভেতর হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুনে পুড়িয়ে খুকি খাতুন (৬৫) নামের মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মাদকাসক্ত ছেলে সোহানুর রহমান খোকন মণ্ডল (৩২)। মাদক সেবনের টাকা না পেয়েই বখাটে ও মাদকসেবী তার নিজের মাকে হত্যা করে। ঘটনা শুধু এখানেই শেষ নয়, বখাটে খোকনের খুনি হয়ে ওঠার পথে একটি পরিবারের নির্মম গল্প রয়েছে।
পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, বগুড়ার ধুনট উপজেলার গজারিয়া গ্রামের আব্দুস সামাদ মণ্ডল ও খুকি খাতুনের ছোট ছেলে সোহানুর রহমান খোকন মণ্ডল। সবার ছোট হওয়ায় বাবা-মায়ের প্রিয় ছিল খোকন। ছাত্র জীবনে বখে যাওয়া খোকন স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। পরে সঙ্গ দোষে মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে সে। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে বিপথে যেতে থাকে। এ অবস্থা খোকনকে সংসারে ফেরাতে বিয়ে করানো হয়। দ্যাম্পত্য জীবনে সে দুই সন্তানের জনক। তারপরেও জীবনকে কর্মমুখী করতে পারেনি খোকন।
অন্যদিকে ব্যবসা, খামার ও বিভিন্ন কাজ শুরুর কথা বলে পরিবার থেকে দফায় দফায় টাকা হাতিয়ে নিয়ে মাদক সেবনে ব্যয় করেছে সে। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেই তার বাবা-মাকে নির্যাতন করত খোকন মণ্ডল। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার স্ত্রীকেও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এর এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীর সংসার ত্যাগ করে দুই সন্তানকে নিয়ে খোকনের স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যান। এরপর খোকন আরও বেশি বখে যায়।
প্রতিবেশীরা জানায়, খোকন প্রায়ই নেশার টাকার জন্য বাবার কাছে বায়না ধরত। কিন্তু টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে মাকে ঘরের মধ্যে জিম্মি করে অস্ত্র দেখিয়ে বাবাকে ভয় দেখাত। বাধ্য হয়ে আব্দুস সামাদ মণ্ডল টাকা ম্যানেজ করে ছেলের কাছ থেকে স্ত্রী খুকি খাতুনকে উদ্ধার করতেন।
গত বছর মাদক সেবনের অভিযোগে খোকন মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। কয়েক দিন কারা ভোগের পর বাড়ি ফিরে আবারও মাদক সেবন শুরু করে। সে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত। মাদকাসক্ত ছেলের হাত থেকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন আব্দুস সামাদ মণ্ডল। ২০১৮ সালে কৌশলে খোকন মণ্ডলকে পুলিশে ধরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু কারাগারে সাক্ষাতের সময় স্বজনদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখালে আব্দুস সামাদ মণ্ডল বাধ্য হয়ে খোকনের জামিনের ব্যবস্থা করেন। ছেলের মাদক সেবনের ব্যয় মিটাতে তিনি প্রায় বিঘা জমি খুইয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রোববার বিকাল ৪টায় ঘরের মধ্যে মাকে বন্দি করে খোকন মণ্ডল। এরপর তার বাবার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু তার বাবা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হাসুয়া (দেশীয় অস্ত্র) দেখিয়ে ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে সামাদ মণ্ডল টাকা সংগ্রহের জন্য প্রতিবেশীদের কাছে ধরনা দেন। কিন্তু তিনি টাকা ম্যানেজ করতে পারেনি।
এ দিকে বাবা টাকা নিয়ে বাড়ি না ফেরায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে খোকন। নিজের মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল বের করে নিয়ে যায় ঘরে। ওই ঘরে মায়ের হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রোল ছিটিয়ে দেয়। তারপর মায়ের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখে প্রতিবেশীরা ধাওয়া করে খোকন মণ্ডলকে আটক করে। পরে তারা ওই ঘরে খোকনের মা খুকি খাতুনকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান।
এ সময় স্থানীয় লোকজন খোকন মণ্ডলকে গণধোলাই দিয়ে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। অন্যদিকে দগ্ধ খুকি মণ্ডলকে চিকিৎসার জন্য ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় নেওয়ার পথে রাত ৮টায় খুকি খাতুনের মৃত্যু হয়।
ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, মাদকাসক্ত খোকন যখন ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে পেট্রোল ঢেলে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন সে মায়ের চিৎকারের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে মায়ের মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। শুধু তাই নয় ঘরের মধ্যে উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্সে গান বাজানো হয়।