স্কুল ও হাসপাতাল বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি, যুবক আটক!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৪:৩০,অপরাহ্ন ২৬ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৩৩০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ইমেল করে কয়েকটি স্কুল ও হাসপাতাল বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দাতা যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আতঙ্ক ছড়াতে ভুয়া মেইলটি পাঠানো হয়েছিল। তারপরও তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গত ২১ আগস্ট রাতে ইমেইলে এই হুমকির দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২৬ আগস্ট এই হামলা হবে।
যিনি মেইল পাঠিয়েছেন, তার নাম এ কে এম আল-আমিন ওরফে নাহিদ বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। শনিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে ধরে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, রাজধানীর মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ২১ আগস্ট রাতে ইমেইলটি পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, ‘স্যার ঢাকায় অনেক স্কুলে আগামি ২৬ আগস্ট থেকে কিছু অসৎ লোক একসাথে বোমা হামলা করতে পারে। আপনি এই কোমলমতি শিশুদের বাঁচান। আমি তাদের একজন। আমার বিবেক মানে নাই বলে আমি আপনাকেই মেইল করে জানালাম। এই ইমেইল নম্বরটি আমার এক বড় ভাইয়ের। সে হামলা সম্বন্ধে কিছু জানে না। স্যার হয়ত তারা জানলে আমাকে মেরে ফেলবে। শিশুদের বাঁচান।’
‘আমি আপনার শুভাকাক্সক্ষী হিসাবে মেসেজ পাঠালাম। এতে আপনার কর্মচারী জড়িত আছে। আপনি এখনি পুলিশকে জানিয়ে রাখুন।’
এরপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে জানানো হয়। পাশাপাশি থানায় করা হয় সাধারণ ডায়েরি।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে হাসপাতাল ও স্কুলগুলোতে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। তৎপরতা শুরু করে গোয়েন্দারা। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে জঙ্গি দমনে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। পাশাপাশি আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।
আল আমিনকে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল নিশাত।
আল আমিনের ইমেইল থেকে ‘শুভাকাকাক্সক্ষী’ হিসেবে বিষয়টি জানানো হলেও পুলিশের ধারণা, তার সঙ্গে দুষ্কৃতিকারীদের যোগসূত্র থাকতে পারে। রবিবার তাকে আদালতে তোলার পর দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
ডিএমপির ঊধ্বর্তন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২২ আগস্ট কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম হাবিবুল হকের পক্ষে মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন শেখ মো. মইনুল ইসলাম। তদন্ত শুরু করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। ইমেইল হেডার ও ইমেইলের থ্রেট কনটেন্টসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। শনাক্ত হন ইমেইলটির ব্যবহারকারী। রায়েরবাজার এলাকার একটি আইপি অ্যাড্রেসের সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে যায়।’
‘শনিবার বিকালে অভিযান পরিচালনা করা হয় রায়েরবাজার ও ধানমন্ডি এলাকায় এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাজারীবাগ থানা এলাকার মনেস্বর জিগাতলার বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের মেইলটি ব্যবহার করে তার অজান্তে এই বার্তা পাঠানো হয়। পাঠিয়েছেন ধানমন্ডির ৮/এর ৭৯ নম্বর বাড়ির এ কে এম আল আমিন। তিনি ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান।’
যোগাযোগ করা হলে মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মহিউদ্দীন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কোনও তথ্য দিতে পারব না। আমাদের থেকে তথ্য দিতে নিষেধ রয়েছে। থানায় যোগাযোগ করলে সবকিছু জানতে পারবেন।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে আমাদের মেইলে দেখতে পাই মেইলটি। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থানায় জিডি করি। এরমধ্যে আমি মন্ত্রী মহোদয়, মহাপরিচালক ও সচিবকে লিখিতভাবে অবহিত করি। জিডি করার পরপরই পুলিশ তৎপরতা চালায়। হুমকি পেয়ে আমরা খুব আতঙ্কিত ছিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে মেইলদাতা গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি।’
দেলওয়ার বলেন, ‘রাজধানীর সব স্কুলে সতর্কতা বাড়াতে বলা হয়েছে, অপরিচিত কাউকে যেন স্কুলে ঢুকতে না দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে স্কুলে ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকেও বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন, বিষয়টি এখন তাদের দায়িত্বে। এ নিয়ে আমাদের চিন্তামুক্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ ফ ম আল-কিবরিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গণ শিক্ষা অধিদপ্তর ও মিরপুরের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে দুটি মেইল দেওয়া হয়। তাতে উল্লেখ ছিল, হাসপাতাল এবং রাজধানীর কিছু স্কুলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হবে। মিরপুর থানায় জিডির পর আমরা দ্রুত তদন্ত শুরু করি। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মেইল প্রদানকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করি।’
গ্রেপ্তার ব্যক্তি ছাড়াও কেউ জড়িতে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে কিবরিয়া বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তিনি একাই রয়েছেন। তবে তার মেইলে উল্লেখ ছিল যে, ‘আমিও তাদের একজন’। তবুও তার সাথে ভারচুলা অথবা ফিজিক্যালি আর কেউ জড়িতে আছে কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।”
‘যতদূর সম্ভব আমরা ধারণা করছি এটি একটি ফেক (ভুয়া) ইমেইল। শুধুমাত্র আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এ কাজ করা হয়েছে। তারপরেও আমরা সতর্ক রয়েছি।’