গ্রেনেড হামলা: রেড অ্যালার্ট তালিকায় নেই তারেক-কায়কোবাদ!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:০৬:৪৭,অপরাহ্ন ২১ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৪৯৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি নেতা মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের নাম বাদ পড়েছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট তালিকা থেকে।
পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান, লবিস্ট নিয়োগ করে নিজেদের নাম বাদ দিয়েছেন বিএনপির এ দুই নেতা। তবে ইন্টারপোলের সঙ্গে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্টারপোলের আর্টিক্যাল ৩ অনুযায়ী কেউ যদি লবিস্ট নিয়োগ করে প্রমাণ করতে পারে- তার রেড অ্যালার্ট রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও মিলিটারি কোন বিষয়ে করা, তাহলে ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারেক রহমান ও শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। এতে তারা ছাড় পেয়েছেন। ঘটনার পর বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে (ইন্টারপোল) তথ্য দেওয়া হচ্ছে।’
এখনো চার জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ আছে যাদের সবাই গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত। এদের মধ্যে বিএনপি শাসনামলে প্রভাবশালী হয়ে উঠা হারিছ চৌধুরী, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টুর ভাই জঙ্গি নেতা তাজউদ্দিন, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ এবং রাতুল আহমেদ বাবু নামে চার জনের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি আছে।
বিদেশে পলাতক আসামি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে থাকে। বিদেশে লুকিয়ে থাকা কোনও আসামির অবস্থান শনাক্ত করতে ইন্টারপোলে মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। এক্ষেত্রে ঢাকার এনসিবি (ইন্টারপোল) ও সংশ্লিষ্ট দেশের ইন্টারপোলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে। পরে সেই দেশকে সতর্ক করা হয়। আসামির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের সঙ্গে কাজ করে।
গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার চলাকালে ‘পলাতক’ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিলে তারেকের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির বিষয়টি জানা যায়। আর কায়কোবাদের বিষয়ে রেড নোটিশ জারি হয় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর।
ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) প্রধান মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া সে সময় একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন আগেই ইন্টারপোলে এ নোটিশ পাঠিয়েছিলাম।’
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তারের পরের বছর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তারেক। বিএনপি একাধিকবার ফেরার ঘোষণা দিলেও তিনি কবে ফিরবেন, সেটা নিশ্চিত নয়।
এর মধ্যে দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের এবং গত ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন তারেক রহমান। যদিও রাষ্ট্রপক্ষ তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন। বিএনপি শাসনামলে প্রভাবশালী হয়ে উঠা বনানীর হাওয়া ভবনে এই হামলার পরিকল্পনা হয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে ফাঁসিতে ঝোলা জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মুফতি হান্নান জানান, এই হামলা পরিকল্পনা নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে তাদের। তিনি বলেন, ‘মুরাদনগরের এমপি কায়কোবাদ সাহেব আমাদেরকে হাওয়া ভবনে নিয়ে গিয়ে তারেক জিয়া ও হারিছ চৌধুরী সাহেবদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আমরা আমাদের কাজ কর্মের জন্য তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা চাইলে তারেক জিয়া আমাদের সর্ব প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এরপর আমরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার জন্য মোহাম্মদপুরসহ আরো কয়েক জায়গায় গোপন মিটিং করি।’
‘আমরা ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভার সংবাদ জানতে পারি। সেখানে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় তারেক জিয়ার সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। আমি, মাওলানা আবু তাহের, শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন আল মারফাজুলের গাড়িতে করে মাওলানা রশিদসহ হাওয়া ভবনে যাই। সেখানে হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামের মুজাহিদ ব্রিগেডিয়ার রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিমকেও উপস্থিত পাইছি, কিছুক্ষণ পর তারেক জিয়া আসেন। আমরা তাদের কাছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর হামলা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাদের সহায়তা চাই। তখন তারা আমাদের সকল প্রকার প্রশাসনের সহায়তার আশ্বাস দেয়।’
‘তারেক সাহেব বলেন যে, আপনাদের এখানে আর আসার দরকার নাই, আপনারা বাবর সাহেব (সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) ও আবদুস সালাম পিন্টুর (সে সময়ের শিক্ষা উপমন্ত্রী) সাথে যোগাযোগ করে কাজ করবেন, তারা আপনাদের সকল প্রকার সহায়তা করবে।’
গত ১০ অক্টোবরের দেওয়া রায়ে বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টুর ফাঁসি এবং তারেক ছাড়াও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় কায়কোবাদের।
বিএনপির দুই নেতার মধ্যে তারেক রহমানের অবস্থান জানা গেলেও কায়কোবাদ এখন কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই সরকারের। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা-৩ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি বিদেশে চলে যান। এরপর আর দেশে ফেরেননি। সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি দেশে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আরো যে চার জনের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট আছে তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা পিণ্টুর ভাই তাজউদ্দিন এবং রাতুল আহমেদ বাবু দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা পাকিস্তানে, হারিছ চৌধুরী মালয়েশিয়ায় অথবা লন্ডনে, মো. হানিফ ভারত অথবা মালয়েশিয়ায় আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ প্রাণ হারান ২৪ জন। অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা। মামলায় মোট ৪৯ জন আসামি ছিলেন। যাদের মধ্যে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
আরো ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির চেষ্টা
পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মীর সোহেল রানা জানান, দণ্ডিত ও পলাতক আরো ১০ জনের অবস্থান জানতে তারা ইন্টারপোলের সহায়তা চাইছেন। এ জন্য প্রস্তুতি চলছে।
গ্রেনেড হামলা মামালায় দণ্ডিতদের মোট ১৬ জন পলাতক। এদের মধ্যে ছয় জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করলেও বাকি ১০ জনের বিরুদ্ধে তা জারি করা যায়নি এখনো।
এরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন আহমদ, মো. ইকবাল, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই।
এনসিবি ঢাকা অফিস বলছে, সিআইডির কাছ থেকে ১০জনের বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো তথ্য দিতে পারছে না। ফলে ইন্টারপোলে নথিপত্র পাঠানোই যাচ্ছে না।