কর্মচারীর মামলায় ড. ইউনুসকে আদালতে তলব!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৭:৫১,অপরাহ্ন ১৩ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৬৩৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসসহ তিনজনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। ড. ইউনূস ছাড়া বাকি দু’জন হলেন গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক খন্দকার আবু আবেদীন।
তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের সদ্য চাকরিচ্যুত সাবেক তিন কর্মচারীর দায়ের করা পৃথক তিন ফৌজদারি মামলায় আগামী ৮ অক্টোবর তাকে ঢাকা শ্রম আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করা হয়েছে।
মামলার বাদী এমরানুল হক, শাহ্ আলম ও আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন গঠন করার কারণে হয়রানিমূলক বদলি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সবশেষে চাকরিচ্যুত করায় গত ৩ জুলাই ড. ইউনূসসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করি। আদালত এ বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সমন জারি করেছেন। যে অনুযায়ী ১০ জুলাই (বুধবার) শ্রম আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। আশা করি, আমরা ন্যায়বিচার পাব।
যারা মামলা করেছেন
১. আব্দুস সালাম, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার চড়াইকোল গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৫ সালের ২৭ জুন গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে জুনিয়র এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
২. শাহ আলম, নিলফামারী জেলার এলাহী মসজিদপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে। প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক তিনি। ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে জুনিয়র এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে যোগদান করেন।
৩. এমরানুল হক, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার নারিকেলতলা গ্রামের সফর আলী ছেলে। তিনি প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য। তিনি ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ গ্রামীণ কমিউনিকেশান্সে স্থায়ী পদে জুনিয়র এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে যোগদান করেন।
যে অভিযোগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে তিন মামলা
মামলার বাদীরা গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে কাজে যোগদান করেন। শ্রমিক হিসেবে নিজেদের সংগঠিত হওয়া ও নিজেদের কল্যাণের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে সিদ্বান্ত গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী নিজেরাসহ অন্যান্য শ্রমিক সহকর্মীদের নিয়ে ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ (প্রস্তাবিত) নামে একটি ইউনিয়ন গঠন করেন এবং তা আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন।
২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল ট্রেড ইউনিয়নটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য মহাপরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়নে আবেদন করেন তারা। ৯ জুন তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। মামলার বাদী আব্দুস সালাম প্রস্তাবিত ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, শাহ আলম প্রচার সম্পাদক ও এমরানুল হক সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং মামলার আসামিরা ইউনিয়নের বিষয় জানতে পারলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন। স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনেও তারা বাধা প্রদান করেন।
বাদীর প্রতি এরূপ অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্যে নানা ধরনের হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন আসামিরা। আসামিদের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বেআইনিভাবে বাদীদের প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং কোনো কারণ ছাড়াই বাদীদের চাকরি হতে টার্মিনেট করেন।
বিষয়টি লিখিতভাবে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালকে অবগত করেন বাদীরা। পরবর্তীতে কাজের বিষয় বহুবার যোগাযোগ ও অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের (বাদীদের) প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ইউনিয়ন গঠন করার কারণে আসামিরা তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করে কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত করেন।
ইউনিয়ন করার কারণে চাকরিচুত্যির বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি বিধায় চলতি বছরের ২৩ জুন আসামি নাজনীন সুলতানা ও খন্দকার আবু আবেদীনের বরাবর রেজিস্টার্ড ডাকযোগে অনুযোগপত্র প্রদান করেন তারা।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা তাদের প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন গঠনের কারণে বাদীদের বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৯৫ (ঘ) ধারা লঙ্ঘন এবং অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছে। বাদীরা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ শ্রম আইন ৩১৩ ধারার তাদের ন্যায়সংগত অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ও ইউনিয়ন গঠন এবং তার কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩৯১ (১) ধারা মোতাবেক মামলা করতে বাধ্য হয়েছে।