ইমেজ সংকটে গোটা পুলিশ বাহিনী!
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৩:৩৯,অপরাহ্ন ০৬ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ১৫৯৯৫ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: শত চেষ্টা করেও ইতিবাচক ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে পারছে না পুলিশ বাহিনী। কতিপয় উচ্চাভিলাষী অসাধু কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে পুলিশ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে ইমেজ সংকটে পড়েছে গোটা পুলিশ বাহিনী।
এ অবস্থায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও বিতর্কিত ডিআইজি মিজান-কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতে আরো বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে পুলিশ কর্তৃপক্ষ রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
এর মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি জোরপূর্বক এক বয়োবৃদ্ধের জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদ্যবিদায়ী প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি সহকর্মীদের জন্য বরাদ্দকৃত ‘সোর্সমানি’ থেকে ২ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। অবসরে যাওয়ার আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ডিএমপির এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, চাকরির শেষ সময়ে এসে তিনি লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগস্টের শেষের দিকে। শেষ সময়ের লুটপাট করে গেছেন ঢাকা রেঞ্জের সাবেক একজন ডিআইজিও। এসব জেনেও না জানার ভান করে আছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সূত্র জানায়, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নিজ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য গত বছর থেকে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।
২০১৮ সালের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়। এবার ২০১৯ কনস্টেবল নিয়োগে আইজিপি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘ক্রুশেড’ ঘোষণা করেন। গত মাসের ২২ তারিখ থেকে সারা দেশে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ শুরু হয়।
ইতোমধ্যে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দেশের ৬৪ জেলা পুলিশ সুপারকে ব্যক্তিগতভাবে হুশিয়ার করেছেন। ফলে এবার শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পথে।
চাকরিপ্রার্থীরা একশ তিন টাকায় ফরম পূরণ করে আবেদন করেছেন— মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হয়েছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। যারা চাকরি পেয়েছেন তারা পুলিশ বাহিনীর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। যারা চাকরি পাননি তারাও অসন্তুষ্ট নন।
তারা আশা করছেন, এবার না হয় আগামীবার চেষ্টা করা যাবে। কিন্তু একসময় মামা-কাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি ছিল সোনার হরিণ। এখানে মেধা-যোগ্যতার কোনো বালাই ছিল না। পুলিশ বাহিনী এ উদ্যোগে নিয়োগ বাণিজ্যলোভী ও দালালদের বাড়া ভাতে ছাই পড়লেও উপকৃত হয়েছে সাধারণ মানুষ।
এ ব্যাপারে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, এবার শতভাগ স্বচ্ছতায় পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। আইজিপি মহোদয়ের সদয় উদ্যোগের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
এবার কোনো রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক নেতা, পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা, এমপি, মন্ত্রীরাও সুপারিশ করেননি। ফলে সাধারণ কোটায় সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ১০৩ টাকার ফরম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। যারা মেধাবী ও যোগ্য কেবল তাদেরই বাছাই করে চাকরি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল- কনস্টেবল নিয়োগে যেন কোনো প্রকার অনিয়ম না হয়। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, দলীয় কোনো নেতা বেশি চাপাচাপি করলে সেটা যেন ওনাকে জানানো হয়। ফলে সরকারদলীয় কোনো নেতা বা মন্ত্রী এমপি এবার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে আমাদের বিরক্ত করেননি।
তিনি আরো বলেন, আমার ঢাকা রেঞ্জেও আমি দায়িত্ব নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।
এদিকে পুলিশের অব্যাহত দুর্নীতি রোধে ঢাকার ৪৯ থানাসহ ঢাকা মহানগর পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্যদের গতিবিধির ওপর নজরদারি শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গত ১৭ জুন ডিএমপি কমিশনার এক আদেশে বলেন, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন সদস্য ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ও জনতার হাতে আটক হয়েছেন। গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবনের অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা ও প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজন অভিযুক্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া টহল পার্টির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে (বিশেষ করে রাত্রিকালীন) নিরীহ জনসাধারণকে সন্দেহভাজন হিসেবে আয়ত্তে নিয়ে টহল গাড়িতে তুলে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে থানায় না নিয়ে অর্থ আদায় করে পথে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ মাঝেমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছে। মানুষ আইনের শাসন দেখতে চায়। দেখতে চায় পুলিশকে বন্ধুর ভূমিকায়।
কিন্তু তার পরিবর্তে উল্টো পুলিশই মানুষের চরম শত্রু হয়, পুলিশের পোশাক পরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়- এ সমাজে মানুষের তাহলে কোনো আশ্রয়ই আর থাকছে না। মানুষ কোথায়, কার কাছে আশ্রয় নেবে? কার কাছে বিচার চাইবে? চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানিতে জড়িত পুলিশ সদস্যদের জনগণ বেতন দিয়ে পুষবে কেন? আর ওই পুলিশের দরকারই বা কী?
কাজেই সময় থাকতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিতে লিপ্ত পুলিশের বিরুদ্ধে কঠিন-কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে এর ফল শুভ হবে না।
পুলিশের ভাবমূর্তির প্রশ্নে সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী বলেন, ভাবমূর্তির প্রশ্নে কোনো আপস করা চলবে না। কারণ এ বাহিনীর অনেক সদস্যের ত্যাগ ও তিতিক্ষা ও জীবনের বিনিময়ে ভাবমূর্তি অর্জিত হয়। একে কোনো ব্যক্তিবিশেষের কারণে ভূলুণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। অভিযুক্ত সদস্য যত প্রভাবশালী ও বড় পদেই থাকুন না কেন তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা হয়েছে, এটা ভালো দিক। এতে পুলিশের ইমেজ বিল্ড হবে।