পাইপের ছিদ্র চেঁপে ধরায় ভাগ্য খোললো শিশু নাঈমের
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৬:৩৪,অপরাহ্ন ২৯ মার্চ ২০১৯ | সংবাদটি ২৩৪০ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: রাজধানী বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর হাজার হাজার জনতা যখন সেলফি-ভিডিওতে অস্থির, ঠিক তখন ফায়ার সার্ভিসের পাইপের একটি ছিদ্র শক্ত করে ধরে ছিলো নাঈম নামে এক ছোট্ট শিশু। সেই নাঈমের পাইপ ধরার স্থির চিত্র এখন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই তা শেয়ার করে প্রশংসা করছে। নাঈমের এই মানবিক কাজের জন্য এরই মধ্যে তাকে পাঁচ হাজার ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওমর ফারুক সামি নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর মীরগঞ্জের বাসিন্দা।
বোস্টন রোটারিয়ান ক্লাবের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, “আমি নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছি। আমি জেনেছি নাঈম খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে, সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। আমি আজ থেকে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিচ্ছি। তবে এই পাঁচ হাজার ডলার তাকে আমি পর্যায়ক্রমে দিবো।” এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তার পরিবারের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান ওমর ফারুক সামি।
পাইপ ধরে থাকা নাঈম থাকেন ঢাকার করাইল এলাকায়। তার বাবা তাদের ছেড়ে অনত্র সংসার করছেন। মা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে নাঈম এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে অন্যদের মতো নাঈমও বনানীতে আসছিলো। সে বলে, “আমি কালকে দুপুরবেলা আইসে দেখি, এইহানে আগুন লাগছে। ফায়ার সার্ভিস অনেক কষ্ট করে আগুন নেভাচ্ছে। আর আমি তখন দেখি পাইপটা ফাটা। সেই জন্য আমি পাইপটা চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম যাতে পানি কাছে গিয়ে আগুন নিভা যায়।”
“আমাকে অনেক লোকে পলিথিন এনে দিয়েছে, যাতে ওটা চাপ দিয়ে ধরে রাখতে পারি। তারপরে ধরলাম। পানি তখন হালকা হালকা পড়ছিলো।”
নাঈম ফায়ার সার্ভিসকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “ফায়ার সার্ভিসকে অনেক ধন্যবাদ তারা আগুন নিভাতে পারছে।”
হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে এসে তিনি কেনো ওই পাইপটা ধরলেন? ছোট্ট শিশু নাঈম বলেন, “আমার মনে হচ্ছিলো, শত শত লোক মারা যাবে। আমি যদি পাইপটা ধরে রাখতে পারি তাহলে ফায়ার সার্ভিস আগুনটা নিভিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারবে।”
এই নাঈম এর আগে গুলশান-১ ফায়ার সার্র্ভিসের পাইপ ধরে তাদের কাজে সহায়তা করেছিল। নাঈম বলেন, “সে সময়ও সেই পাইপটা ছিঁড়ে ছিলো। তার সঙ্গে আরো অনেকেই সেই পাইপ ধরেছিলো।”
নাঈম বড়ো হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চান। তার দাবি, “পুলিশ এখানে (বনানীতে) অনেক সাহায্য করেছে। পুলিশ মানুষকে পিটিয়ে সরিয়ে দিয়েছে যাতে তারা সুষ্ঠুভাবে বাড়ি যেতে পারে।”
অথচ এই মহৎ কাজের জন্য কোনো ধরনের পুরস্কারও চান না নাঈম। তিনি বলেন, “আল্লাহ আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। আমি পুরস্কার চাই না।”
নাঈমকে নিয়ে সারাদেশ ব্যাপী এ ধরনের প্রশংসার কথা তার মা কতোটুকু জানেন?
নাঈমের মা নাজমা বেগমের সঙ্গে কথা হয় আওয়াজবিডির। তিনি বলেন, “আমি প্রথমে জানতাম না। পরে জানলাম মানুষের কাছে। বড় ছেলে নাঈম ও ছোট মেয়ে সুমাইয়া আক্তার কাজলকে নিয়ে আমি করাইল বস্তিতে থাকি।”
নাজমা বেগম বলেন, “ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। ছেলেকে তিনি অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে চান। ছেলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। মানুষের বিপদে কাজ করতে চায়।”
তিনি জানান, “স্বামী অনত্র বিয়ে করে সংসার করছে। তাদের খোঁজখবর নেয় না। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিয়ের কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালাই।”
বনানীর এ ঘটনায় শ্রীলঙ্কান একজন নাগরিকসহ এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন শতাধিক। তবে পুলিশের হিসেব মতে নিহতের সংখ্যা ২৫।