করোনা মহামারিতে ঘরমুখো মানুষ, আক্রান্ত বাড়ার আশঙ্কা!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৩:০৩,অপরাহ্ন ২৩ মে ২০২০ | সংবাদটি ৬১৯ বার পঠিত
আমাদের প্রতিদিন ডেস্ক:: ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। এতে করে করোনাভাইরাসের হটস্পট ঢাকা থেকে সারাদেশেই করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঈদুল ফিতরের ঠিক দুই দিন আগে শনিবার (২৩ মে) যখন দেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হলেন তখনও ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষদের গ্রামে যাওয়া বন্ধ করা যায়নি।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পরিবার নিয়ে গ্রামে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে পদ্মা নদী পার হচ্ছিলেন।
মারাত্মক সংকটের সময়েও এ অঞ্চলে উৎসব বরাবরই অগ্রাধিকার পেয়েছে এবং শনিবারে এ অবস্থা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া থেকে মানুষকে বিরত রাখতে কর্তৃপক্ষ প্রথমে ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মহাসড়কে যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছিল।
এর আগে মঙ্গলবার পদ্মায় মাওয়া ফেরি ঘাট এলাকা থেকে পুলিশ বাড়ি ফেরা লোকদের ফেরত পাঠিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সরকার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নদীপথে ফেরি পরিষেবা চালু করে এবং মানুষকে নদী পার হতে এবং ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়ি যেতে অনুমতি দেয়।
সেই সাথে সরকার তার কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে গণপরিবহন চলাচল স্থগিত রেখে ব্যক্তিগত যানবাহনে ঈদে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঈদের দুই দিন আগে সারা দেশে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ঈদযাত্রার অনুমতি দেয়াকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
শুক্রবার রাতে শাওয়াল চাঁদ দেখা না যাওয়ায় রবিবার সৌদি আরবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
আর শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের কোথাও চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
বাংলাদেশে শনিবার পর্যন্ত ৩২ হাজার ৭৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪৫২ জন মারা গেছেন।
এটা আর রোধ করার উপায় নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শুরুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থাতে ছিল। ঢাকার মধ্যে ৮৫ শতাংশ রোগী থাকা মানে ‘রিলেটিভলি’ ভালো। কিন্তু ছড়িয়ে গেলে সামাল দেওয়া কঠিন। ঢাকা থেকে মানুষ গ্রামে যাওয়াতে সে সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেলো।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ঢাকা ও এর আশেপাশের জেলাগুলো ছাড়া বিভিন্ন জেলাতে এখনও সংক্রমণের হার কম ছিল। কিন্তু সেসব জায়গায় এখন সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হলো। এখন বলা যায়, ৬৪ জেলা নয়, পুরো দেশের আনাচে-কানাচে করোনা ছড়িয়ে গেলো। আর এটা বোঝা যাবে এখন থেকে আরও ১৪-২১ দিন পর। সংক্রমণ তো কম-বেশি সব জায়গাতেই আছে, তবে এখন আরও বেশি হবে। এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে এটা সবসময়ই হয়।
দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম করোনা রোগী মারা যান ১৮ মার্চ। করোনাতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৫২ জন। আর দেশে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৮ জনের।
শুক্রবার (২২ মে) কোভিড-১৯ নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে কাউকে গ্রামে না যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘গ্রামে যাওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করুন। শহর থেকে গ্রামের দিকে যাবেন না। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য শহর থেকে গ্রামে যেতে চাচ্ছেন, আপনার কারণে সেই প্রিয়জন না ঝুঁকিতে পড়েন।’
অধ্যাপক নাসিমা বলেন, ‘অনুগ্রহ করে সহযোগিতা করুন, সরকারের সব নির্দেশনা মেনে চলুন এবং চলাচল বন্ধ করুন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং প্রিয়জনকে সুস্থ রাখুন।’
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ঢাকার বাইরে করোনা কম ছিল, এবার সেটা ছড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে ৫৬ শতাংশ আর ঢাকা বিভাগে ৮৭ শতাংশ রোগী ছিল। আর ১৩ শতাংশ ছিল সাত বিভাগে। এখন এই হার অনেক বেড়ে যাবে। ঢাকা থেকে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। ঈদের পর যে ইনকিউবিশন পিরিয়ড রয়েছে সেই ১৪ দিন পর সারাদেশেই অনেক কেস পাওয়া যাবে বলেই আমাদের আশঙ্কা।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বাস সার্ভিস ছাড়া সবই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকায় লকডাউন কার্যকর করা যায়নি, পুরো দেশকে কী করে করবে।’
ঈদের ছুটিতে যেভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে তাতে পুরো দেশেই করোনা রোগী ছড়িয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ এবং পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, ‘প্রায় দু’মাসের লকডাউনের পরিস্থিতিতে থেকে যখন ঈদ আসে তখন মানুষকে আটকে রাখা কঠিন। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া বেশ কঠিন। যদিও এটা ঠেকানো উচিত ছিল।’
গ্রামে এতদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও এখন ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সব জায়গায় সমানভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে মন্তব্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যারা ঢাকা ছেড়েছেন তাদের মধ্যে লক্ষণবিহীন ক্যারিয়ার হিসেবে রয়েছেন অনেকেই। এখন তারা অন্যদেরকে সংক্রমিত করবে। যার কারণে ঢাকার বাইরে সংক্রমণের হার বহুগুণে বেড়ে গেলো।’