খাদিজাকে কোপানোর দৃশ্য ভিডিও করলেও বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৮:৪০,অপরাহ্ন ০৪ অক্টোবর ২০১৬ | সংবাদটি ৬৮২ বার পঠিত
প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে সিলেটের এমসি কলেজে প্রাঙ্গণে একজন ছাত্রীকে এলোপাতারিভাবে কুপিয়ে আহত করেছে এক ছাত্রলীগ নেতা। গুরুতর আহত ছাত্রী খাদিজা বেগম ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন।
খাদিজা বেগমকে কোপানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিলেট এম সি কলেজের একজন ছাত্র (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে খাদিজা বেগমের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই ছাত্র বিবিসি বাংলার কাছে ঘটনাটির বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন, সেটির সঙ্গে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির পুরোপুরি মিল রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আশঙ্কা করছেন তাঁর নাম প্রকাশ হলে হয়তো কোনভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দূরে একজন ব্যক্তি মাটিতে পড়ে থাকা একজনকে ক্রমাগত আঘাত করছেন। এ ভিডিওতে হামলাকারী এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিস্কারভাবে সনাক্ত করা যাচ্ছে না।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা সে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দূর থেকে অনেকে ঘটনাটি দেখছিলেন এবং এক পর্যায়ে অনেকে ছুটোছুটি শুরু করে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে অনেকে মোবাইল ফোনে ভিডিও করলেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ষার জন্য কেউ এগিয়ে যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় তিনি অনেকের সাথে ভলিবল খেলছিলেন। হঠাৎ মেয়েদের চিৎকার শুনে তিনি এবং তার খেলার সঙ্গীরা এগিয়ে যান।
তিনি বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি যে, পুকুরের উত্তর পাশে একটি ছেলে একটি মেয়েকে কোপাচ্ছে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মেয়েটি চিৎকার করছিল”।
আশেপাশে এত ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও তারা কেউ খাদিজা আক্তারকে রক্ষার জন্য এগিয়ে যায়নি কেন? দূর থেকে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও করলেও খাদিজাকে বাঁচানোর জন্য কেউ কি প্রয়োজন বোধ করেনি?
হামলাকারী বদরুল আলম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ নেতা।
প্রত্যক্ষদর্শী বলছিলেন, “সাধারণ স্টুডেন্টরা চেয়েছিল যেতে, কিন্তু চাপাতি হাতে ছেলেটা তেড়ে আসছিল বারবার। সেজন্য সাহস করে কেউ মেয়েটাকে রক্ষার জন্য যেতে পারেনি। ঘটনাস্থলে না থাকলে বুঝতে পারবেন না যে ছেলেটা কিভাবে চাপাতি হাতে তেড়ে আসছিল”।
তিনি বলছিলেন, “হামলাকারী ছেলেটির আচরণ এতটাই আগ্রাসী ছিল, কেউ যদিও মেয়েটিকে রক্ষার জন্য এগিয়ে যেত তাহলে সে ব্যক্তিও আক্রান্ত হতো”।
আরও পড়ুন:
মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সিলেটের সেই ছাত্রী
পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে ফের গুলি, উত্তেজনা অব্যাহত
খাদিজাকে কোপানোর পর হামলাকারী বদরুল আলম যখন পালিয়ে যাচ্ছিল তখন ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ এগিয়ে আসে।
হামলাকারী বদরুলকে হাত থেকে চাপাতি ফেলে দেবার জন্য পুলিশ আহবান জানালেও সে তাতে সাড়া দিচ্ছিল না । পুলিশ যখন তাকে গুলি করার হুমকি দেয় তখন সে চাপাতি ফেলে দেয়।
সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন আহত ছাত্রী খাদিজা বেগম সিলেট মহিলা কলেজের ছাত্রী। ডিগ্রি পরীক্ষা দিতে তিনি এমসি কলেজে এসেছিলেন। কারণ এমসি কলেজ ছিল তার পরীক্ষা কেন্দ্র।
‘প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয় বদরুল’
খাদিজা বেগমের পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে পাঁচ-ছয় বছর আগে বদরুল আলম খাদিজাদের বাড়িতে গৃহশিক্ষক হিসেবে ছিল। কিন্তু তখন খাদিজাকে প্রেম নিবেদনের কারণে বদরুলকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়।
এরপর থেকে বিভিন্ন সময় খাদিজাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতো বলে অভিযোগ করছেন খাদিজার চাচা জাহিদ আহমেদ।
বিভিন্ন সময় খাদিজার কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে বদরুল আলম হুমকি দিয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। কিন্তু খাদিজার পরিবারের তরফ থেকে কখনও বিষয়টি পুলিশকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।
হামলাকারী বদরুল আলম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের ছাত্র এবং সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লীগের সহ-সম্পাদক।
কিন্তু ছাত্রলীগের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, মাস ছয়েক আগে বদরুল আলম সিলেটের একটি গ্রামের কলেজে চাকরি নিয়েছেন বলে তারা জানতে পারেন।
অন্য জায়গায় চাকরি নেবার কারণে বদরুল আলম এখন আর ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে না বলে দাবি করছেন মি: খান।
ছাত্রলীগ যাই দাবি করুক না কেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে বদরুল আলমের নাম রয়েছে। চাকরি নিলেও বদরুল আলম নিজে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেনি বা ছাত্রলীগও তাকে নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও বদরুল একেবারেই অনিয়মিত ছিল বলে উল্লেখ করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও এখনও শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারেনি।
ছাত্রলীগ নেতা ইমরান খান দাবি করছেন, গত ছয়মাস ধরে বদরুল আলমের সাথে সংগঠনের কোন যোগাযোগ নেই। হামলাকারী বদরুল আলমের শাস্তিও দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান খান।।
এদিকে আজ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খাদিজা আক্তারের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকে কোনওভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।