‘সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন চলবে’
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩৩:২২,অপরাহ্ন ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ৭৭২ বার পঠিত
সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরকার সরে না আসলে আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।তিনি বলেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি তাদের মুনাফার জন্য দেশ ও জনগণের ক্ষতি জেনেও সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কাজ চালিয়ে যাবে সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’
সরকারকে ভাবার সুযোগ দিয়ে দুই মাস আগের ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে জাতীয় কমিটির ডাকা হরতাল কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর ১০টি পয়েন্টে হরতাল সমর্থকরা অবস্থান নেয়।
আধাবেলা হরতাল চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরই মধ্যে রাজধানীর শাহাবাগ এলাকায় হরতাল শুরুর মুহূর্তে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় হরতাল সমর্থকদের।
এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর, পল্টন, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, লালবাগ, তেজগাঁও ও আজিমপুর এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। যা এখনো চলমান।
সকাল থেকে রাজধানীর পল্টন এলাকার বিভিন্ন সড়কে হরতাল সমর্থকরা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে পল্টন মোড়ে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাধ্য হয়ে হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সরকার যদি জনগণের কথা ভেবে আমাদের যুক্তি-তর্ক বোঝার চেষ্টা করতো তাহলে হরতাল দেওয়ার দরকার হত না।
তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সংবিধানশীল হতো তাহলে এ ধরনের কর্মসূচি আসতো না। সরকারকে ৭ বছর ধরে রামপাল বন্ধের আহ্ববান জানানো হয়েছে।’
শান্তিপূর্ণ হরতালের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার ভয়ভীতি দেখানোর জন্য সকালে শাহাবাগে দফায় দফায় পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়েছে। টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে হরতাল সমর্থকদের ওপর।’
বৈজ্ঞানিক তথ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে বাংলাদেশের জলবায়ু হুমকির মুখে পড়বে এমন কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলে সরকার জনগণের দাবি মেনে নিত।’
সুন্দরবন রক্ষায় হরতাল বন্ধ করতে সরকার বাস মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছে। তার পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখানোর জন্য শাহাবাগে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে বলেও জানান আনু মুদাম্মদ।
রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান হরতালের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাভাবিক রয়েছে এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
শাহাবাগে হামলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারিতেই রামপাল প্রকল্পের অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কথা। সুন্দরবনের কাছে হওয়ার কারণ দেখিয়ে শুরু থেকেই এ কেন্দ্রটির বিরোধিতা করছে বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে প্রথম থেকে এর বিরোধিতা করে আসছে পরিবেশবাদীরা। তবে সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন বক্তব্যে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলেছেন, ‘এ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।’
শুরু থেকেই এ বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনে রয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
২৬ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে ২৬ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীতে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে তেল-গ্যাস-খনিজ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। বৃহস্পতিবারের হরতালে বিএনপির সমর্থনের কথা জানান দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।