সিলেট লেখক ফোরাম’র আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৯:২৫,অপরাহ্ন ১৮ নভেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ২৪৩৯ বার পঠিত
সিলেট লেখক ফোরাম’র ১২ বছরপুর্তি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পরিণত হয় দেশ বিদেশের লেখক গবেষক ভাষাবিদ কবি সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ সাংবাদিক ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের বর্ণাঢ্য মিলনমেলায়। এক্সেলসিয় সিলেট হোটেল এন্ড রিসোর্টে ফোরাম সভাপতি কবি নাজমুল ইসলাম মকবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, নাগরী গবেষক ও ভাষাবিদ যুক্তরাজ্যের জেমস লয়েড উইলিয়ামস।
বক্তব্যে তিনি বলেন, সিলেটী ভাষা শুধু মুখের ভাষা নয়। এর নিজস্ব লিপিও আছে। আর সেটি হলো নাগরী লিপি। এ নিয়ে আমি অনেক গবেষনা করেছি এবং বেশ শিখে ফেলেছি। এটাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি সিলেট লেখক ফোরাম’র আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে তাকে আমন্ত্রন করায় সিলেটবাসীকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন, প্রথম নাগরী কমপিউটার ফন্ট ‘সুরমা’ এবং ‘নিউ সুরমা’ উদ্ভাবনকারী গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. স্যু লয়েড উইলিয়ামস। বক্তব্যে ড. স্যু বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মতো সিলেটী ভাষার যে নিজস্ব লিপি আছে এটা সকলের জন্য সহজ ও ব্যবহার উপযোগি করার লক্ষ্যে এটাকে কমপিউটার ফন্টে রূপান্তরিত করতে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। এতে সিলেটী পন্ডিতজনের সহায়তা নিয়েছি। অনেক সাধারন মানুষের সাথেও কথা বলেছি। এখন সিলেটবাসীর দায়িত্ব এটাকে সর্বস্থরের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। তিনি আরও বলেন, প্রথম নাগরী কমপিউটার ফন্ট উদ্ভাবন করায় সিলেট লেখক ফোরাম’র ১২ বছরপুর্তি উপলক্ষে ১২ জন গুণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আমাকে সম্মাননা প্রদান করায় আমি গর্বিত।
১২ দিনের অনুষ্ঠানমালার সমাপনী উৎসব ১৪ নভেম্বর সোমবার সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক কবি মাওলানা ছাদিকুর রহমান এবং কবি গীতিকার মোঃ আজম আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্য উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রিন্সিপাল কবি কালাম আজাদ, সাংবাদিক কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, সাহিত্যিক সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিষ্ট্রার নাট্যকার কমেডিয়ান হেদায়েত তুর্কী, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারন সম্পাদক আজিজুল হক মানিক, কামাল বাজার আলিম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতি এ.কে.এম মনোওর আলী, হলিয়ারপাড়া ফাযিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল লেখক গবেষক মাওলানা মইনুল ইসলাম পারভেজ, গল্পকার সেলিম আউয়াল, কবি সাংবাদিক নাসির হেলাল, সিলেট লেখিকা সংঘের সভানেত্রী রওশন আরা চৌধুরী।
ফোরাম’র ১২ বছরপুর্তিতে ১২ জন গুণী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধিতরা হচ্ছেন, প্রথম নাগরী কমপিউটার ফন্ট ‘সুরমা’ এবং ‘নিউ সুরমা’ উদ্ভাবনের জন্য বৃটিশ নাগরিক ড. স্যু লয়েড উইলিয়ামস। শিক্ষা ও সমাজসেবায় লে. কর্নেল (অব.) এম আতাউর রহমান পীর এবং অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল হক। পূঁথি, লোকসাহিত্য গবেষনা এবং গীতিকবিতায় হাসনাত মুহ. আনোয়ার। সাহিত্য সাংবাদিকতা ও সমাজসেবায় মুহাম্মদ মুনতাসির আলী। শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক হিসেবে অবদানের জন্য মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম। চিকিৎসা, সমাজসেবা ও সাংবাদিকতায় ডা: মোঃ মিফতাহুল হোসেন সুইট। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য এম.এ রহিম (মরনোত্তর) এবং আলহাজ্ব মোঃ জবান আলী। প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে অবদানের জন্য হাসান আলী। প্রবাসে সাহিত্য সাংবাদিকতা ও সমাজসেবায় গোলাম সাদত জুয়েল। সংস্কৃতি ও সমাজসেবায় মহিবুর রহমান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক মুহম্মদ বশির উদ্দিন, অধ্যাপক কবি নাজমুল আনসারী, প্রভাষক কবি শাহাদাত আলিম, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ আবুল খায়ের, দুবাই প্রবাসী কবি ছড়াকার ও পূঁথিকার লুৎফুর রহমান, কবি তুষার মুহিব, শিক্ষাবিদ ও লেখক মাহবুব শিরাজী, লেখক ও ব্যাংকার আলী আশরাফ চৌধুরী খালেদ, গীতিকার ও নাট্যকার সরোয়ার হোসেন চেরাগ, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি লেখক কলামিস্ট মিজানুর রহমান মিজান, প্রভাষক মাওলানা মুখলিছুর রহমান, কাজী মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ, মাওলানা আব্দুল মতিন, সায়েফ আহমদ সায়েক, হাবিবুর রহমান, মাওলানা শরিফ উদ্দিন, তক্বী তাহমিদ, মাহমুদ হাসান, তালিবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাসুক আহমদ, সুস্মিতা শারমিন, সুজন বিশ্বনাথ উপজেলা সাধারন সম্পাদক মোঃ মধু মিয়া, ফোরামের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্মাদক লেখক মো. ফখর উদ্দিন, সদস্য কবি তৌফিক চৌধুরী, কাকন ফকির ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক দেলওয়ার হোসাইন, মোঃ আব্দুস শুকুর বকুল, প্রিন্সিপাল মোঃ আব্দুস সবুর, সাংবাদিক নুর উদ্দিন, মাহমুদ পারভেজ, আফজল হোসেন, মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ ফারুক মিয়া, ফয়সল আহমদ, সুমন আহমদ, দুলাল আহমদ, বেলাল আহমদ প্রমূখ।
শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন শিল্পী জুনাইদ আযহারী। স্বরচিত কবিতা আবৃতি করেন কবি নাসির হেলাল। কমেডি পরিবেশন করেন নাট্যকার ও কমেডিয়ান হেদায়েত তুর্কী। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নিজের লেখা পুঁথি পাঠ করেন কবি গীতিকার লুৎফুর রহমান। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আরিফ রব্বানী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি কালাম আজাদ বলেন, দেশে বিদেশে সাহিত্য আড্ডার পাশাপাশি আমাদের গুণীজনদের সম্মান দিতে গুণীদের স্মৃতিময় স্থানসমুহে সাহিত্য আড্ডা আয়োজনের মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবী জানিয়ে লেখক ফোরাম যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সাংবাদিক কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী বলেন, ফোরামের উদ্যোগে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাহিত্য সাধনায় উদ্বুদ্ধ করণ ও প্রতিযোগিতা আয়োজনের মতো প্রশংসনীয় কার্যক্রম সবার নজর কেড়েছে।
সাহিত্যিক সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী বলেন, লেখক ফোরাম ১২ বছর পুর্তিতে ১২ দিনের অনুষ্ঠানমালা, ১২ জন গুণী ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব আয়োজন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
প্রিন্সিপাল মাওলানা মনোওর আলী বলেন, লেখক ফোরাম সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি অসহায়দের চিকিৎসাসেবায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে।
নাট্যকার হেদায়েত তুর্কী বলেন, পরিবেশ উন্নয়নে বৃক্ষরোপন কার্যক্রম, লেখক সম্মাননা, মেধাবীদের সম্মাননা, রত্নগর্ভা মা বাবা সম্মাননা, পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসব, গ্রন্থ প্রকাশনা উৎসবসহ ফোরামের ব্যতিক্রমী সকল কার্যক্রম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।